বসুরহাটে আবার সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত ৩০

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত এবং কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম আলাউদ্দিন (৩২)। তিনি চরফকিরা ইউনিয়নের চরকালী গ্রামের মমিন উল্যাহর ছেলে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন হৃদয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। বাকি আহতদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন, নিজাম উদ্দিন ও কনস্টেবল আলাউদ্দিন।

সংঘর্ষে আহত একজনএ ঘটনায় বসুরহাট পৌরসভা এলাকায় বুধবার (১০ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল হক মীর।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিকালে বসুরহাট রূপালি চত্বরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ঝাড়ু মিছিল নিয়ে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সভার শেষ দিকে প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে সভাস্থলের দুই দিক থেকে একযোগে হামলা চালান। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি ও বোমার শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিক-ওদিক ছোটাছুটিতে ও লাঠির আঘাতে ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। তিনি দাবি করেন, ‘মির্জা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে চরএলাহী ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক চেয়ারম্যানের ছেলে রাজুসহ (২২) অন্তত চার জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’

সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপঅন্যদিকে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা জানান, এ ঘটনার সঙ্গে তিনি বা তার লোকজন জড়িত নন। তবে, তার অন্তত ১৫-২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বসুরহাট পৌরসভার একজন গাড়িচালক বোমায় আঘাত পেয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশসহ পাঁচ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা হলেন চরএলাহীর রাজিব হোসেন রাজু (২২), সালা উদ্দিন (১৮), চর কালীর হোসেন (১৮) ও আদনান শাহ (২১)।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাদের মির্জা গ্রুপ বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে ও মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপ উপজেলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছে। বাজারে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন অবস্থান নিয়েছে।

বসুরহাট থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি জানান, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১০-১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পৌরসভার দিক থেকে ছোড়া ইটের আঘাতে তিনিসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।

প্রসঙ্গত: এই দুই দলের মধ্যে গত ১৯ ফেব্রুয়ারিও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষের সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দু’দলের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরসহ ১৫ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় বিবদমান পক্ষ দুটি পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের নেতাদের কাউকে পুলিশ এখনও গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে খোঁজেনি।

দেখুন ভিডিও...