রবিবার (২৮ মার্চ) হরতাল চলাকালে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ধ্বংসের নগরীতে পরিণত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন ও জেলা প্রেস ক্লাবসহ অসংখ্য স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তাঁরা পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ ও প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানান, হরতাল চলাকালে রবিবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তাণ্ডব চালানো হয়। এ সময় শহরের মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রতিষ্ঠানসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় জেলা পরিষদ ভবন, পৌরসভা ভবন, পৌর মিলনায়তন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, পুলিশ লাইন, সদর থানা, খাঁটি হাতা বিশ্বরোড হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, শহরের কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালী বাড়ি, দক্ষিণ কালী বাড়ি, রেলওয়ে স্টেশন, জেলা আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্যের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের কার্যালয়, তাঁর নিজের ও শশুরবাড়ি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার চত্বর ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন।
তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে স্টেশন তো কোনও অন্যায় করেনি। সেখানে সার্ভার রুমের সব কম্পিউটার পুরিয়ে দেওয়া হয়। স্টেশনকে অচল করা হয়। এটা জনগণের বিরুদ্ধে এক ধরনের জিহাদ বলে আমরা মনে করি।’ অতীতের বিচারহীনতার কারণে এ হামলা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘গতকাল আমার নিজ কার্যালয় ও বাসভবনে হামলা করেছে। অফিসে থাকা আওয়ামী লীগের মূল্যবান নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার অফিস থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে বিজিবি সদস্যরা ছিলেন। কেউ অফিসটিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি। পুলিশের সহযোগিতা পাইনি। ফায়ার সার্ভিস ছিল সম্পূর্ণ নিরব।’ হামলার ঘটনাটিকে তিনি ‘৭১ এর পরাজিত শক্তির দোষরদের পরিকল্পিত বলে আখ্যায়িত করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা বলবো যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি অদৃষ্টপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। আমার বয়সে এ ধরনের হরতাল দেখিনি। এ নিয়ে হেফাজত নেতৃবৃন্দ কী বলবেন, আমি জানি না। তবে হেফাজত নেতৃবৃন্দকে স্পষ্ট করতে হবে, তারা কেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বাড়িতে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা করলেন, এর একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।’
আজ বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া সব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জানান, এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত হেফাজত নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নামে অর্ধশত স্থাপনা ভাঙচুর ও পুরিয়ে দিয়েছেন। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় নামপরিচয়হীন পাঁচ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪ জনকে। এছাড়া গতকালের ঘটনায় একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে।