ভবন পুড়িয়েছে হেফাজত

খোলা আকাশের নিচে দায়িত্ব নিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরপরিষদ

প্রায় ১৫৪ বছর বয়স ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার। তবে বয়সের ভারে নয়, তাণ্ডবের শিকার হয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি এখন খানিকটা নুয়ে পড়েছে। পৌরভবনের দেয়ালগুলোই এখন শুধু দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে-ভেতরে এখনও পোড়া গন্ধ।

এই অবস্থাতেই দায়িত্ব নিতে হলো নতুন পৌর পরিষদের। খোলা আকাশের নিচে বসে দায়িত্ব নিলেন তারা। করলেন নতুন পৌর পরিষদের প্রথমসভা।

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দায়িত্ব নিতে গিয়ে অনেকে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তাণ্ডবের নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও তুলেন তারা।

গত ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালের দিনে অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পৌরসভা কার্যালয়টি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে পৌরসভার শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পৌরভবনের সামনে এখনও ধ্বংসস্তূপ। কার্যালয়ের সামনেই তাঁবু টানিয়ে রাখা হয়েছে। এটিতেই অস্থায়ী অফিস ও তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করার কথা জানানো হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে দায়িত্ব বুঝে নেন নতুন পৌর পরিষদ। কথা হয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক জীবন, মিজানুর রহমান আনসারী, আব্দুল মালেকের সঙ্গে। এমন অবস্থার মধ্যে দায়িত্ব নিতে হবে তা তারা কল্পনাও করতে পারেননি বলে জানান।

পৌর মেয়র নায়ার কবির বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হিসেবে পৌরসভার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। কিন্তু গত ২৮শে মার্চ হেফাজতের তাণ্ডবে জেলার ইতিহাসে নজিরবিহীন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। তাদের তাণ্ডবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা আজ প্রাণহীন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সকল নথি ও রেকর্ডপত্র। দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই পৌরসভায় এমন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করার ভাষা নেই। জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে এভাবে ভস্মীভূত করে দেবে, এটা ভাবা যায় না। বর্তমানে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনও সময় ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আজ খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় বসে আমি দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্বভার গ্রহণ করছি।

হেফাজতের তাণ্ডবকে ইতিহাসের নজিরবিহীন ন্যক্কারজনক ঘটনা বলে উল্লেক করেন তিনি। পাশাপাশি তাণ্ডবের কারণে সেবা দিতে না পারায় নাগরিকদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত পৌরসভাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীসহ সকলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। তাহলে হয়তো আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

উল্লেখ্য, গত ২৮শে মার্চ হেফাজতের ইসলামের আহ্বানে হরতাল চলাকালে দেড়শ বছরের পুরনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা ভবনসহ এর পাশে আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় রেলস্টেশন, জেলার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ অন্তত অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান। তাণ্ডবের ঘটনার পর এখন পর্যন্ত ৪৫টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৩ জনকে। তবে গ্রেফতারকৃতরা কেউ হেফাজতের নেতাকর্মী নয়।