খাগড়াছড়িতে পর্যটনে স্থবিরতা

যেকোনও ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত থাকা খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পট, বাসস্টপ, জীপ স্টপ, সিএনজি স্টপ, হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজসহ সব জায়গায় সুনসান নীরবতা। পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়ীর মাঝে শুধু হা-হুতাশ। তাদের দাবি, চরম লোকসানে দিনতিপাত করলেও এনিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোন পদক্ষেপ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হবার পর জেলা প্রশাসনের নির্দেশনামতে বন্ধ রয়েছে জেলার প্রায় ৫০টি পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। ৩১ মার্চ হতে বন্ধ থাকা এসব পর্যটন ও বিনোদন পার্কগুলো সরকার পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। শুধু পর্যটন স্পট নয়, বন্ধ আছে খাগড়াছড়ি ও সাজেকের প্রায় দুই শতাধিক আবাসিক ও খাবার হোটেল এবং প্রায় ৫ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের পরিবহন।

জেলা শহরের জিরো মাইল সংলগ্ন জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনামতে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকলেও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন পর্যন্ত কোনও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।

জেলা পরিষদ পার্কে গড়ে দুই হতে আড়াই হাজার পর্যটক এবং ছুটির দিনে পাঁচ হাজার পর্যন্ত পর্যটক আসতো এবং তাদের ভালো আয় হতো। পুরো পার্কে প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। পার্ক বন্ধ থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ নেই। লোকসান হচ্ছে উল্লেখ করে প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে কথা হয় জ্ঞানাঞ্জন ত্রিপুরার সঙ্গে। তিনি বলেন, এই পর্যটনটি পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসন। ছুটির দিনে গড়ে ৭০ হাজার টাকা হতে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হতো এই পর্যটন কেন্দ্র হতে। দীর্ঘদিন পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় বিনোদনপ্রেমিদের যেমন লোকসান হচ্ছে, তেমনি পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মালিক বা কর্তৃপক্ষের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি শহরের হোটেল অরণ্য বিলাসের মালিক স্বপন চন্দ্র দেবনাথ তার হোটেলসহ প্রায় দুই শতাধিক হোটেল দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আয় না হলেও প্রত্যেক হোটেলের স্টাফদের বেতন ভাতা তাদের পরিশোধ করতে হয়েছে।

শুধু হোটেল ব্যবসায় প্রায় দশ হাজার লোক সরাসরি জড়িত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যে ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ হবে না। তবে আমরা পর্যটন খাতের বিষয়ে সরকারের কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

খাগড়াছড়ি পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, খাগড়াছড়ির তকমা এখন পর্যটন শহর হিসেবে। কিন্তু সেই পর্যটক আসার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় পুরো খাগড়াছড়িবাসী ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি বলেন, প্রায় ৫ শতাধিক ছোট-বড় গাড়ি বসে আছে। যার সঙ্গে কয়েক হাজার লোক জড়িত। এ ছাড়া হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজের মালিক কর্মচারী, খাবার হোটেলের মালিক-কর্মচারী, পর্যটকদের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া, চলাফেরা, বিনোদনের সঙ্গে কৃষক পর্যন্ত জড়িত। পর্যটন স্থবির থাকায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত এবং অর্থনৈতিক চাকাও অচল হয়ে পড়ছে। অনেকের ঋণ আছে। সেই ঋণের টাকা পরিশোধেও কষ্ট হচ্ছে। এমন অবস্থা থাকলে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা দেউলিয়া হয়ে পড়বে।

জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সকল সেক্টর নিয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করে, পদক্ষেপ নেয়। বিনোদনের চেয়ে দেশের মানুষ অনেক উপরে বিধায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। সংক্রমণ কমলে এই সেক্টর খুলে দেওয়া হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চালক, হেলপার ও অন্যান্য কর্মচারীদের ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্যদের বিষয়টিও সরকার বিবেচনা করবে।