‘মেয়র আমাকে হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন, ঘুষি মারেননি’

এবার নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘুষির ভিডিও ভাইরাল হওয়া বৃদ্ধ বলেছেন, ‘মেয়র সাহেব হাত দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিয়েছেন। মারেন নাই। মেয়র অনেক ভালো মানুষ।’

গতকালের বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার (১৭ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন বসুরহাট পৌর এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক কালু নামের ওই বৃদ্ধ। 

শুক্রবার (১৬ জুলাই) সকালে পৌরসভা চত্বরে অসহায়দের মাঝে শাড়ি এবং লুঙ্গি বিতরণ অনুষ্ঠানে মেয়র কাদের মির্জা তাকে ঘুষি মারেন- এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

শনিবার বসুরহাট পৌরসভা কার্যালয়ে চাল নিতে এসেছেন এনামুল হক কালু। এ সময় তিনি বলেন, ‘কাপড় দেওয়ার সময় আমাদের ঝামেলা দেখে, মেয়র সাহেব (আবদুল কাদের মির্জা) হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। আমারে ঘুষি মারেন নাই। মেয়র খুব ভালো মানুষ। গরিব মানুষকে সাহায্য করেন।’

এনামুল হক কালু বলেন, ‘আমি আজ আবার এসেছি, মেয়র সাহেবের কাছ থেকে চাল নেওয়ার জন্য। আমি নিজ থেকে এসেছি। ওনার বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নাই। মেয়র সবসময় আমাদের সাহায্য করেন।’ 

আরও পড়ুন: ত্রাণ নিতে আসা বৃদ্ধের বুকে কাদের মির্জার ঘুষি

২০ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ফেসবুক লাইভ ভিডিওর মধ্যে ১৭ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে দেখা যায়, মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ওই বৃদ্ধকে একটি শাড়ি দিয়েছেন। বৃদ্ধ শাড়িটি পরিবর্তন করতে চাইলে কাদের মির্জা তার বুকে ‘ঘুষি’ মেরে সরিয়ে দেন।

আজও পৌরসভা কার্যালয়ে আসেন সেই বৃদ্ধ

বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। 

স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেওয়া লকডাউনে জনজীবন অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি আমার পৌরসভার নিম্নআয়ের মানুষকে সহযোগিতা করে আসছি। এর আগেও আমি সর্বদা চেষ্টা করতাম, অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে থাকতে। পৌরসভা ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আমি শুধু কোম্পানীগঞ্জ নয়, কবিরহাট, দাগনভূঞা, সোনাগাজী, সেনবাগসহ বিভিন্ন উপজেলার অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করে আসছি। কখনও কোনও মানুষ সাহায্য প্রত্যাশা করে আমার কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যায়নি।

আজও (শুক্রবার) আমার পৌরসভায় অসহায় মানুষের জন্য এক হাজারের বেশি শাড়ি-লুঙ্গি, ৫০০ জনকে নগদ অর্থ ও প্রায় দুই হাজার জনের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। পৌরসভার ছোট্ট আঙিনায় সহস্রাধিক মানুষ একত্রিত হয়ে যাওয়ায় দ্রুততার সঙ্গে কাপড় বিতরণ করতে হয়েছিল।

যাদের দেওয়া হয়েছে, তাদের দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছিল। তখন একজন মানুষ কাপড় পাওয়ার পরও দাঁড়িয়ে থাকায় এবং একাধিকবার বলার পরও মাস্ক না পরায় তাকে হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। এখানে তাকে আঘাত করা হয়নি। এ বিষয়ে তিনি কোনও আক্ষেপও করেননি। 

সহস্রাধিক মানুষের মাঝে এতগুলো ত্রাণ বিতরণ করার সময় অজান্তে কিছু অসাবধানতা হতে পারে, এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত কোনও কিছু করা হয়নি। আমি সবসময় অসহায় গরিব মানুষের পাশে আছি। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, অসহায় গরিব মানুষের সেবা করে যাবো।

সবার কাছে প্রত্যাশা রাখব, অন্যের সমালোচনা না করে, যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় গরিব মানুষের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ান। একজনের সমালোচনা না করে মানুষকে সহযোগিতা করুন।

আবদুল কাদের মির্জা মুঠোফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদে বিত্তশালীদের আত্মীয় কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপহার না দিয়ে অসহায় গরিবদের দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের এমপির সহযোগিতায় প্রায় চার হাজার অসহায় গরিবের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি, খাদ্য এবং নগদ অর্থ উপহার দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সহস্রাধিক মানুষের মাঝে একসঙ্গে এত ত্রাণ বিতরণ করার সময় অজান্তে কিছু অসাবধানতা হতে পারে। এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও কিছু করা হয়নি। একটি মানুষ কাপড় পাওয়ার পরও দাঁড়িয়ে থাকায় এবং একাধিকবার বলার পরও সে মাস্ক না লাগানোর কারণে তাকে দ্রুত সরে যেতে হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলাম। তাকে কোনও আঘাত করা হয়নি।’