পাহাড়ে কচুর বাম্পার ফলন

এক সময়ের ন্যাড়া পাহাড় এখন সবুজ আর সবুজ। তবে এই সবুজের সমারোহ গাছপালায় নয়, বেশির ভাগ পাহাড় ঢেকে আছে মুখী কচুর সবুজ পাতায়। চলতি বছর খাগড়াছড়ি জেলায় এই কচুর ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। পাহাড়ে এটি ‘ছড়া কচু’ হিসেবে পরিচিত। কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ফেনী ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করা যাবে পাহাড়ে উৎপাদিত এই কচু।

খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলায় চলতি বছর ৮৫৮ হেক্টর জায়গায় ছড়া কচুর চাষ করা হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসেরও একাধিক ছড়া কচু চাষের প্লট রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষের পাশাপাশি প্রত্যেক কৃষক, যাদের পাহাড়ে জায়গা আছে তারা ব্যক্তিগতভাবে পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য অল্প অল্প ছড়া কচু চাষ করেছেন। জেলায় চলতি বছর আবহাওয়া কচু চাষের উপযোগী ছিল। তাছাড়া পাহাড়ের মাটি দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ, তাই ছড়া কচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় কচুর ছড়া তোলা হলেও বেশির ভাগ কৃষক অপেক্ষা করছেন বৃষ্টি শেষ হওয়ার। পাহাড়ের কচুর ছড়া খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর, এজন্য এর চাহিদা পুরো দেশজুড়ে।

জেলার গুইমারা উপজেলার গৈছড়ির কৃষক সোনাধন চাকমা জানান, চলতি বছর পাঁচ কানী জায়গায় ৪০ মণ বীজ রোপণ করেছেন তিনি। এতে খরচ হয়েছে পৌনে দুই লাখ টাকা। ফলন ভালো হয়েছে। পুঁজি উঠিয়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন এই কৃষক। একই এলাকার কৃষক উদ্দীপন চাকমা জানালেন, ৩০ হাজার টাকা খরচ করে পাঁচ মণ বীজ রোপণ করেছেন। তিনি এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন।

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার কৃষক আবদুল আলী জানান, তিনি ১০ একর পাহাড়ে কচুর চাষ করেছেন। তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। যেভাবে এখন পর্যন্ত ফলন দেখা গেছে তাতে বিনিয়োগের দ্বিগুণ টাকা উঠবে বলে আশাবাদী তিনি।

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এবার ছড়া কচুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ১৯ থেকে ২০ মেট্রিক টন। উপজেলা কৃষি অফিস পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্রদর্শনী প্লট করেছে। ফলন অনেক ভালো হয়েছে।’

খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. মর্ত্তুজ আলী জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে বীজ বপনের করা হয়। অনেক সময় প্রথম বৃষ্টিপাতের পর পরই বীজ লাগানো হয়। বীজ লাগানোর কয়েক মাসের মধ্যে কৃষকরা ফলন পান। কচু চাষে পতিত জমি যেমন চাষের আওতায় আসছে, তেমনি কৃষকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।