২০ বছর পর সেই পয়াতের জলায় সোনালি ফসল

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সেই পয়াতের জলায় ২০ বছর পর আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে ওই এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) উদ্যোগে খাল খনন করা হয়। এতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দেয়।

পয়াতের জলার মাঠে লাগানো বিনা-১৯ ধান সম্প্রসারণ উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) স্থানীয় ফকির বাজারে কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবসের আয়োজন ও ফসলের মাঠ পরিদর্শন করা হয়। এতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, বিএডিসি কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং বুড়িচং উপজেলা
কৃষি কর্মকর্তা মোছা. আফরিনা আক্তার। সভাতিত্ব করেন বিনা কুমিল্লা উপ-কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।

ফকির বাজারে কৃষকদের নিয়ে মঙ্গলবার মাঠ পরিদর্শন করা হয়

বুড়িচং উপজেলার সদর, বাকশীমুল, ষোলনল ও রাজাপুর ইউনিয়নের একটি বিশাল অংশ নিয়ে পয়াতের জলা। জলাবদ্ধতা এসব এলাকার কৃষি ও কৃষকের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এ কারণে পয়াতের জলার ১২ হাজার একর আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যার প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী পাঁচ হাজারেরও বেশি কৃষক পরিবার। 

পয়াতের জলার কৃষকরা রোপা-আমন ধান লাগাতে পারেন না। আবার কিছু কৃষক বোরো ধান আবাদ করলেও আগাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তা ঘরে তুলতে পারেন না। চলতি বছরের শুরুতে মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে জলার চারপাশের খালের ২৫ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন কাজ করা হচ্ছে। ১৮ কিলোমিটারের বেশি খাল পুনঃখননের কাজ শেষ হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, মাঠে সোনালি ফসল বাতাসে দোল খাচ্ছে। ধানের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। কোথাও কৃষক ধান কাটছেন। খালে মাছ ধরছেন স্থানীয়রা।

হরিপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মাস্টার বলেন, খাল খননের ফলে মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। জমিতে ফসল হচ্ছে। খালে মাছ ধরতে পারছে। খালের পাড়ে চলাচলের পথ হয়েছে। সেখানে বিএডিসি গাছ লাগিয়েছে। তা পুষ্টি পূরণের সাথে সাথে কৃষককে ছায়া দেবে।

জলার ১২ হাজার একর জমিতে আউশ চাষের আশা

বুড়িচং সদর দক্ষিপাড়া এলাকার কৃষক মমিন হোসেন জানান, জলাবদ্ধতার কারণে আমরা আগে এক ফসলও ঠিকমতো করতে পারতাম না। খাল খননের কারণে জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। এবার আউশ ফসল করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি।

মাঠ পরিদর্শনে এসে  প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, পয়াতের জলায় ২০ বছর জলাবদ্ধতা ছিল। বিষয়টি নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড.আবদুর রাজ্জাক ও প্রয়াত এমপি আবদুল মতিন খসরুর কাছে সুপারিশ করা হয়। তাদের পরামর্শে এখানে খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। খাল খননে জলাবদ্ধতা দূর হয়ে যায়। আগে এখানে আউশ ধান চাষ করা যেতো না। এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বিনার উদ্যোগে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। এখানে ভালো ফলন হয়েছে। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়বে। 

বিনা কুমিল্লা উপ-কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে আউশ ধান হতো না। এবার আমরা বিনা-১৯ ও বিনা -২১ চাষ করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি। আশা করি এক সময় এই জলার ১২ হাজার একর জমিতেই আউশ ধানের চাষ হবে।