চলতি পথে হোঁচট খেয়ে বালুর স্তুপে পড়ে করোনাকালে সুরক্ষা ডিভাইস তৈরি করেছেন এক কলেজ শিক্ষার্থী। বিষয়টা শুনতে অদ্ভুত শোনলেও এমনটাই ঘটেছে। করোনাকালে সুরক্ষা ডিভাইসটি তৈরি করেছেন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি-২০২১ এর পরীক্ষার্থী অপূর্ব মজুমদার।
অপূর্ব তার ডিভাইসটির নাম দিয়েছেন ‘বঙ্গ সোস্যাল ডিসটেন্স ব্রেকিং অ্যালার্ট কিট উইথ অ্যাডভান্স শার্টার টেকনোলজি’। হেলমেটের সঙ্গে এ ডিভাইসটি সংযুক্ত করা হয়েছে। ডিভাইসটি পরিহিতের তিন ফুট দূরত্বে কোনও মানুষ আসলেই সেন্সর তা অনুধাবন করতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে হেলমেটের সঙ্গে লাগানো অত্যাধুনিক শিল্ড মুখমণ্ডল ঢেকে দেয়। এতে ডিভাইসটি মাস্কের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে ডিভাইসটি আর্টিফিসিয়াল ভয়েস অ্যালার্টের মাধ্যমে সতর্কবার্তা দেবে। এরমাধ্যমে জনসচেতনতাও বাড়বে বলে জানিয়েছেন অপূর্ব।
সরকারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পেলে উদ্ভাবিত ডিভাইসটির আরও উন্নয়ন করতে চান তিনি।
ডিভাইসটি থেকে সতর্কবার্তা হিসেবে উচ্চারিত হয়- ‘মাস্ক পরিধান করুন। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। নিয়মিত ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত হাত ধৌত করুন’। ডিভাইস ব্যবহারকারীর সামনে কোনও ব্যক্তি যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে ততক্ষণ সুরক্ষা দিতে সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া সামনের ব্যক্তি সরে যাওয়ার পর সর্বোচ্চ এক মিনিট পর্যন্ত শিল্ডটি মুখমণ্ডল ঢেকে রাখবে।
অপূর্বের বাবা নিখিল মজুমদার রামগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। তারা দুই ভাই।
অপূর্বের সঙ্গে কথা হলে তিনি আরও বলেন, প্রায় ৭ মাস আগে হাঁটতে বের হয়ে হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে বালুর স্তুপে পড়ে যাই। এতে তার পুরো শরীরে বালু লেগে যায়। তাৎক্ষণিক চোখের দুটি পাতা বন্ধ হয়ে যায়। এতে চোখের ভেতর বালু ঢুকতে পারেনি। এর থেকেই মাথায় চিন্তা আসে। ধারণা করি- যদি চোখের পাতা পড়ে গিয়ে কোনও বস্তু থেকে চোখকে রক্ষা করতে পারে, তাহলে এমন কিছু তৈরি করা যায়, যা মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং করোনা প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
সে লক্ষ্যে তিনি গবেষণা শুরু করেন। ১৫ বার গবেষণায় ব্যর্থ ও সাত বার যন্ত্রপাতি বদলের পর ১৬ বারের সময় তিনি সফল হন। অপূর্ব উদ্ভাবন করেন বঙ্গ সোস্যাল ডিসটেন্স ব্রেকিং অ্যালার্ট কিট উইথ অ্যাডভান্স শার্টার টেকনোলজি নামে ডিভাইসটি। গবেষণার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার ১০ হাজার টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। তবে এটি তৈরি ও মানুষের হাতে পৌঁছাতে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার মতো খরচ পড়বে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, ইন্ডিয়ান ক্লিনিক অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এর এক গবেষণায় দেখা গেছে- সঠিকভাবে সামাজিক দূরত্ব বিধি না মেনে চললে একজনের থেকে ৪০৬ জন করোনা সংক্রমিত হতে পারে। আর যদি দূরত্ববিধি ৭৫ শতাংশ মানা হয় সেক্ষেত্রে একজন রোগী থেকে মাত্র আড়াইজনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এজন্য করোনা বিস্তার রোধে পদক্ষেপ হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। সে লক্ষ্যে অপূর্ব ডিভাইসটি তৈরি করেন। ডিভাইসটির তিন ফুট দূরত্বে থাকা ব্যক্তিকে বা ব্যক্তিবর্গকে আর্টিফিসিয়াল ভয়েস অ্যালার্টের মাধ্যমে সতর্ক বার্তা প্রদান করবে।
শিক্ষার্থী অপূর্ব মজুমদার আরও বলেন, আমার এ ডিভাইসটি জরুরি বিভাগ, মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও করোনা আক্রান্ত রোগীসহ সাধারণ জনগণ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে পারবেন। ডিভাইসের সেন্সরটি ৬০ ডিগ্রি কোণে সর্বোচ্চ ৪০ ইঞ্চি দূর পর্যন্ত কাজ করবে। চাইলে ডিভাইসটি কাস্টমাইজ করা যাবে।