কুরবানির ঈদের সময় দেশীয় খামারি ও কৃষকের কথা মাথায় রেখে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ ছিল। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে গরু-মহিষ আমদানি শুরু হয়নি। এতে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এছাড়া টেকনাফ উপজেলার করিডোরের ব্যবসায়ীরাও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গরু কিনে রেখে পড়েছেন ক্ষতির মুখে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত গরু-মহিষ না থাকায় বেড়ে গেছে মাংসের দাম। এতে সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিপাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগে গত ৯ জুলাই দেশের খামারিদের লোকসানের কথা চিন্তা করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র করিডোর টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর মিয়ানমার থেকে আর কোনও গরু-মহিষ আসেনি। সর্বশেষ চলতি বছরের গত মে ও জুনে ২৫ হাজার ৮৬৮টি গরু ও চার হাজার ২৫৮টি মহিষ মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়। তখন আমদানি বাবদ এক কোটি ৫০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করে শুল্ক বিভাগ।
এদিকে গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘হঠাৎ করে কোরবানির ঈদের আগে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে পশু আমদানি বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। এতে আমরা যারা ১৮ বছর ধরে করিডোরে ব্যবসা করছি, তাদের লোকসান হয়েছে। কেননা আগে থেকে কোনও নির্দেশনা না দিয়ে পশু আমদানি বন্ধ করে দেয়। তাতে মিয়ানমারে গরু-মহিষ ও ছাগল কিনে রাখা অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’
পশু আমদানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে মাংসের সংকট তৈরি হয়েছে এবং দামও বেড়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ ৩৫ লাখ মানুষের বসতি। ফলে এই অঞ্চলে গরুর মাংসের চাহিদাও অনেক। মিয়ানমার থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা মাংসের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
জেটিতে বসে থাকা স্থানীয় মোহাম্মদ জিয়াবুল বলেন, ‘আমি যেখানে বসে রয়েছি, এক মাস আগেও এটি খুব ব্যস্ত এলাকা ছিল। কিন্তু এখন নিরিবিলি পড়ে আছে। ফলে এখানকার ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের মন্দায় দিন কাটছে। পাশাপাশি আমরা যারা এসব ব্যবসার সঙ্গে রয়েছি, তাদেরও দুর্দিন চলছে। কেননা এখানে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আসলে আমার মতো অনেকে দৈনিক মজুরিতে কাজ করে সংসার চালান। অন্তত এসব মানুষদের কথা চিন্তা রেখে এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি।’
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোরের আমদানিকারক সমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ মনির জানান, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের লোকসান পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া এ ব্যবসার সঙ্গে অনেক মানুষের রুটি-রুজির বিষয় জড়িত।’
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত বিপুল পরিমাণ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও এখনও করিডোরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনও স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনায় কোরবানির ঈদের আগ থেকে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। সেটি এখনও চলমান রয়েছে।’
টেকনাফ স্থল বন্দর শুল্ক কর্মকর্তা মো. আব্দুন নুর বলেন, ‘সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে। এই হাট থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় হতো।’
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা চোরাচালান নিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ হয়। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত নতুন কোনও নির্দেশনা আসেনি।’