সাক্ষী নিজেকে সিএনজি চালক প্রমাণ করতে পারেননি: আসামিপক্ষের আইনজীবী

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ৪নং সাক্ষী হিসেবে মো. কামাল হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তবে এদিন ৪নং সাক্ষী নিজেকে সিএনজি চালক প্রমাণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মামলার অন্যতম সাক্ষী মো. কামাল হোসেন ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। টেকনাফ শামলাপুর পুলিশের চেকপোস্টে মেজর সিনহা হত্যার সংঘটিত ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি সবকিছু আদালতে বর্ণনা দিয়েছেন। আদালতের নিষেধ থাকায় তার বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ‘সোমবার দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্য গ্রহণের দ্বিতীয় দিনে চতুর্থ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিচারাধীন কোনও মামলার আদালতের অভ্যন্তরীণ বিষয় প্রকাশ করা আইনের পরিপন্থী। তাই, মিডিয়ায় দেওয়ার মতো কোনও তথ্য নেই।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে সাক্ষী কামাল হোসেন আদালতে যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন তা আমরা মনোযোগ সহকারে শুনেছি। সাক্ষী কামাল হোসেন নিজেকে সিএনজি চালক পরিচয় দিলেও তা প্রমাণে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে তেমন কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। একইভাবে আজ  আদালতে সাক্ষী দিতে এসেও কোনও প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। সুতরাং ঘটনার সময় সে কিছু দেখেছে বলে মনে হয়নি।’

এর আগে গত রবিবার মোহাম্মদ আলী নামে ৩নং সাক্ষীর আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। এ ছাড়া গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট টানা তিন দিন মামলার ১নং সাক্ষী ও বাদী শারমিন সাহরিয়া ফেরদৌস এবং ২নং সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেন আদালত।

গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। এদিকে, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে। এরপর মেজর সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গত ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই  সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্ত শেষে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন র‌্যাব ১৫-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।