কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারের জন্য কেনা দুই কোটি টাকার হারভেস্টার মেশিনটি ৯ বছর ধরে প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এদিকে লোকবল সংকটের দোহাই দিয়ে মেশিনটি ফেলে রাখায় ক্ষতির শিকার হচ্ছেন হ্রদের জেলে ও মাঝিরা। বর্ষা মৌসুমে কচুরিপানার জঞ্জালের কারণে নৌ যান চলাচল ব্যাহত হয়। ইঞ্জিনচালিত নৌ যান বিকল হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় হ্রদে নৌ যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে হারভেস্টার মেশিনটির ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, রাঙামাটির চার উপজেলার তিন লাখ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র উপায় নৌপথ। তবে হ্রদের চারদিকে কচুরিপানা ছড়িয়ে পড়ায় স্বাভাবিক নৌ-চলাচলে দেখা দেয় বিপত্তি। ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা কচুরিপানা এড়িয়ে চলাচল করতে পারে না। এছাড়া কচুরিপানার কারণে অন্য নৌ যানেরও চলাচলে সময় ও ব্যয় বাড়ছে।
সম্প্রতি সময়ে কাইন্দারমুখ নামক এলাকায় হ্রদের বুকে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে জমে থাকা কচুরিপানা কারণে বিপাকে পড়তে হয় হ্রদে চলাচলকারী নৌ যানগুলোকে। এতে নৌ রুটে চলাচল করা সাধারণ মানুষ, জেল ও মাছ ব্যবসায়ীরা পড়েছে চরম বিপাকে। উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে ভেসে আসা কচুরিপানায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে এই চ্যানেলটি। কচুরিপানার কারণে জেলার চার উপজেলায় যোগাযোগে বেড়েছে দুর্ভোগ।
কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে বলেন, কাপ্তাই হ্রদকে কচুরিপানা মুক্ত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। এত টাকা খরচ করে যে মেশিন কেনা হয়েছে সেটি কেন ব্যবহার করা হয়নি, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
রাঙামাটি দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটি সভাপতি মো. ফারুক হোসেন বলেন, কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার কারণে নৌ চলাচলা ও লেকের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। সরকারের এত অর্থ ব্যয়ে মেশিনটি কেন এতদিন ব্যবহার করা হলো না, দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জবাব দিতে হবে। সমন্বয়ের মাধ্যমে মেশিনটি ব্যবহার উপযোগী ও পরিচালনার জন্য লোকবল নিয়োগের দাবি জানান তিনি।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, কচুরিপানা কৃষি কাজের জন্য এক ধরনের সম্পদ। কচুরিপানা থেকে প্রচুর জৈব সার তৈরি করা যায়। আমরা কৃষকদের এই কচুরিপানা দিয়ে কীভাবে জৈব সার তৈরি করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারি। তাহলে কচুরিপানার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া এই আবর্জনাকে সম্পদে রূপান্তর করার জন্য সরকারি উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমি যতটুকু খবর নিয়েছি এই হারভেস্টার মেশিনটি কে বা কারা পরিচালনা করবে, এই সমস্যা নিয়ে এতদিন পড়ে ছিল। আমরা এখন বলেছি তেল লাগলে তেল দেওয়া হবে, তবু যেন মেশিনটি ব্যবহার করা হয়। মেশিনটি যাতে ব্যবহার করা হয় সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।