পুলিশের ভুলে বিনা অপরাধে ২ বছর কারাভোগ, পাচ্ছেন মুক্তি

পুলিশের ভুলে ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে বিনা অপরাধে দুই বছর তিন মাস কারাভোগের পর মুক্তি পাচ্ছেন শফি উল্লাহ (৬০)। তিনি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার দক্ষিণ মেহের ঘোনা এলাকার সৈয়দ আমিরের ছেলে।

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালত তাকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। একইসঙ্গে তৎকালীন কক্সবাজার সদর মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তিনি মুক্তি পেতে পারেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের এএসআই লিটনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে একটি ডাকাতির মামলায় মূল আসামি ঈদগাঁও উপজেলার মেহের ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে শফিউল আলমের বদলে একই এলাকার সৈয়দ আমিরের ছেলে শফি উল্লাহকে গ্রেফতার করে। এরপর আদালত শফি উল্লাহকে কারাগারে পাঠান। সে থেকে তিনি কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দি আছেন। 

তবে গত বছরের ৭ মার্চ কক্সবাজার জেল সুপার স্বাক্ষরিত একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুনের দৃষ্টিগোচর করা হয়। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কারান্তরীণ শফি উল্লাহ আসল আসামি নন। আসল আসামি হলেন একই এলাকার আমির হোসেনের ছেলে শফিউল আলম (৫০)। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের এসআই আবু রায়হান দীর্ঘ তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে গ্রেফতারের সময় নেতৃত্ব দেয়া তৎকালীন পুলিশের এএসআই লিটনের বিরুদ্ধে ভুল ও দায়িত্বের অবহেলার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে উক্ত মামলার অন্যান্য আসামিদের জামিনের বিষয়ে মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে চলে যায়।

এ জন্য চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত। এরই অংশ হিসেবে বিনা অপরাধে কারাগারে থাকা শফি উল্লাহর বিষয়টি গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুনরায় আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন করেন কক্সবাজার জেল সুপার। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে পুনরায় চিঠি দেন। দীর্ঘ সময়েও হাইকোর্ট থেকে কোনও উত্তর না আসায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইলকে অবহিত করা হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল অতিরিক্ত দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। আজ অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন মামলাটি যাচাই-বাছাই করে শফি উল্লাহকে জামিনের আদেশ দেন।

একইসঙ্গে কর্তব্যে অবহেলার কারণে এএসআই লিটনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জন্য এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে আদালতকে জানানোর জন্য কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। আদেশের অনুলিপি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ডিআইজি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার পুলিশ সুপার ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পাঠানো হয়।