সিনহা হত্যা: গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন চায় আসামিপক্ষ

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার তৃতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। চতুর্থ দফার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গল ও বুধবার) নির্ধারণ করেছেন আদালত।

মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের সময় সামরিক এক সংস্থার গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল, ওই প্রতিবেদনটি চেয়ে আদালতের করেছে আসামিপক্ষ। যদিও আদালত আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছে।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে তৃতীয় দফার শেষ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। দিনব্যাপী মামলার অন্যতম সাক্ষী সেনা কর্মকর্তা সার্জেন্ট আয়ুব আলী, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. শাহীন আবদুর রহমান ও মোক্তার আহমদের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এখন পর্যন্ত এ মামলায় ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

আজ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, বুধবার দিনব্যাপী তিন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে আদালত চলতি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখে দিন ধার্য করেন।

তিনি আরও জানান, আসামিপক্ষের আইনজীবী বিচারের সময় দীর্ঘায়িত করতে আদালতে বারবার বিভিন্ন অজুহাতে দরখাস্ত দিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে বুধবার আরেকটি দরখাস্ত দেন। কিন্তু, দেশের একটি বড় সংস্থার গোপন নথি চাওয়ায় আদালত দরখাস্তটি নাকচ করে দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের সময় সামরিক এক সংস্থার গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল, ওই প্রতিবেদনটি চেয়ে আমরা আদালতের কাছে দরখাস্ত দিয়েছি। আদালত তা নাকচ করেছেন। এছাড়াও মামলার সাক্ষী সেনা কর্মকর্তা সার্জেন্ট আয়ুব আলীকে আমরা জেরা করা থেকে বিরত থেকেছি।’

আদালতের একটি সূত্র জানিয়েছেন, তৃতীয় দফার শেষ দিনে সাক্ষী সামরিক শাখার কর্মকর্তা সার্জেন্ট আয়ুব আলী সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আদালতকে জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার পর খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে ঘটনার পরবর্তী চিত্র নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হন এবং মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। মূলত ওই সময়ে পুলিশ কর্তৃক হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার সঙ্গে বিরূপ আচরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট টানা তিন দিন মামলার প্রথম দফায় ১নং সাক্ষী ও বাদী শারমিন সাহরিয়া ফেরদৌস এবং ২নং সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। একইভাবে গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর টানা চার দিনে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত।

গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত বছরের ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন সাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত থেকে মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় র‍্যাবকে। ঘটনার ছয় দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত পুলিশ সদস্য আত্মসমপর্ণ করেন।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করে। পরে পুলিশের দায়ের মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এরপর গ্রেফতার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।