তিন গ্রামে যাওয়ার সড়ক নেই

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরের গ্রাম হাজাপাড়া, কমল চরণ কার্বারিপাড়া, হারুংপাড়া। সড়ক না থাকায় এসব গ্রামে যেতে হয় পায়ে হেঁটে। উঁচু-নিচু পাহাড়, দুর্গম বন-জঙ্গল, ছড়া পেরিয়ে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টারও বেশি। পাহাড়ে অনেক উন্নয়ন হলেও এসব গ্রামের মানুষ এখনও বঞ্চিত মৌলিক অধিকার থেকেই। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে এই তিন গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ।

হাজাপাড়া এলাকার প্রধান কার্বারী রুমিয়ন ত্রিপুরা বলেন, গ্রামগুলো জেলা সদরের কাছাকাছি হলেও মূলত মাটিরাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। এসব গ্রামগুলোতে বসবাস করেন শতাধিক পরিবার। অধিকাংশই ত্রিপুরা ও চাকমা জনগোষ্ঠির। যাদের প্রত্যেকেই সরকারের সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ৪০ দিনের কর্মসূচি, ত্রাণ সুবিধা, এমনকি মৌলিক অধিকারগুলোর কিছুই পৌঁছে না আমাদের কাছে। রাস্তা না থাকায় জুম ফসলের ওপর নির্ভরশীল পাহাড়িরা উৎপাদিত ফসল মাথায় আর কাঁধে করে নিয়ে আসেন বাজারে। চলাচলের ব্যবস্থা বলতে পাহাড়ি দুর্গম পথ আর ধইল্যা ছড়া খাল। এসব এলাকায় বিদ্যালয় না থাকায় কোমলমতি শিশুরা সাত কিলোমিটার দূরের ঠাকুরছড়া বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করছে। 

পাহাড়ে প্রাকৃতিক ছড়া স্থানীয়দের পানির অন্যতম উৎসতিনি আরও বলেন, বর্ষায় ছড়ায় পানি বাড়লে শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে এসব গ্রামের মানুষ তীব্র পানি সংকটে ভোগে। খাল এবং কুয়োর পানিতে জীবনধারণ করতে হয় তাদের। চলমান করোনা মোকাবিলায় দেশব্যাপী ভ্যাকসিন কার্যক্রম চললেও এসব গ্রামে একজনও টিকা পায়নি বলে দাবি করেন কার্বারী রুমিয়ন ত্রিপুরা।

স্থানীয় মিলন ত্রিপুরা বলেন তাদের রাস্তা নেই, স্কুল নেই, চিকিৎসার জন্য ক্লিনিক নেই। চিকিৎসার জন্য হয় খাগড়াছড়ি না হয় মাটিরাঙা যেতে হয়। দিন এনে দিনে খাওয়া মানুষের কোনও খোঁজ রাখেন না জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তারা। 

ছড়া বা কুয়ার পানিতেই বাঁচে পাহাড়ের মানুষখাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. সুধীন কুমার চাকমা বলেন, নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা ভোট চাইতে দুর্গম এলাকাগুলোতে আসেন। পরে আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। অবহেলিত পাহাড়িদের খোঁজ নিতে পা পড়েনা সরকারি কর্মকর্তাদেরও। সরকারি সেবা বঞ্চিত এসব পাহাড়ি গ্রামবাসীদের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেন তিনি।

মাটিরাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনেক বড় প্রকল্প গ্রহণ করা যায় না। তবে দুর্গম এলাকার লোকদের স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সরকারের সব উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ত করার জন্য বড় প্রকল্প গ্রহণের কথা বলেন তিনি। 

পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকার শিশুদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বিদ্যালয়মাটিরাঙা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম দুর্গম ও প্রান্তিক গ্রামের মানুষের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এসব এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ এলাকার উন্নয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে খুব দ্রুত প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।