‘চট্টগ্রামের মেয়র-এমপিদের জোর করে পাবলিক বাসে বসিয়ে দেওয়ান হাট হতে স্টিল মিল পর্যন্ত আনন্দ ভ্রমণ করানো হোক। পরেরদিন দেখবেন সবাই হাসপাতালে ভর্তি হবে।’ বিমানবন্দরগামী চট্টগ্রাম নগরীর একমাত্র সড়কটির বেহাল দশা নিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে উপরের কথাটি লিখেছেন নগরীর ইপিজেড এলাকায় কর্মরত থ্যিআনিস অ্যাপারেল লিমিটেডের স্যাম্পল ম্যানেজার আতিক শাহ। নগরীর বাকলিয়া এলাকার এই বাসিন্দা প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে ইপিজেড এলাকায় অফিসে যান।
সড়কটির বেহাল দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাকরির সুবাদে প্রতিদিন এ পথে আসা-যাওয়া হয়। সড়ক আর সড়ক নেই বললেই চলে। এই সড়ক দিয়ে সকালে অফিস যাওয়ার পর শরীর একবারে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এরপর অফিস শেষে বিকালে বাসায় ফিরতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। ২-৩ ঘণ্টা লাগে অফিস থেকে বাসায় ফিরতে। গত এক বছর ধরেই এভাবে কষ্ট করছি। তাই মনের কষ্ট থেকে এটি লিখেছি। গত এক বছর ধরে সড়কটির এমন অবস্থা কেউ স্বচক্ষে দেখলে মনে হবে এটি কোনও যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এলাকার সড়ক।’
শুধু আতিক শাহ নয়, এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করা লাখো শ্রমিককে অফিসে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ সড়কটি দিয়ে চট্টগ্রামের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুটি ইপিজেড, তেল শোধনাগার, অফডক ডিপোসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়।
বিকল্প কোনও পথ না থাকায় এ সড়কে যানবাহন চলছে থেমে থেমে, গর্তের ভেতর পড়ে হেলেদুলে। কখনও গর্তে পড়ে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। যাত্রীরা নেমে সেই গাড়ি ঠেলে তুলছেন। এসব গর্তে পড়ে অনকে সময় গাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত যানজটের।
লাখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে অতিসত্বর সড়ক দুটি মেরামত করে চলাচল উপযোগী করে তুলতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। সম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে তিনি এই অনুরোধ জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলাকালে জনগণের সাময়িক কিছুটা ভোগান্তি হতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের নামে নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শেখ মুজিব সড়ক এবং বিমানবন্দর সড়কটি যান ও জনগণের চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৃষ্টির কারণে আমরা এতদিন কার্পেটিং করতে পারিনি। বর্ষা শেষ হয়েছে, আগামী মাসের শেষ দিকে আমরা কার্পেটিং কাজ শুরু করবো। বর্ষার মধ্যেও কার্পেটিং করতে পারতাম। তখন করলে সড়কটি টেকসই হতো না। কিছুদিন পর আবার কার্পেটিং উঠে যেতো। এখনও আমরা কার্পেটিং করার পর পতেঙ্গার ওই দিকে সড়কটির কিছু অংশে জোয়ারের পানি উঠে। যেখানে জোয়ারের পানি উঠে সেখানে কার্পেটিং করলেও থাকবে না। ওই এলাকায় বিকল্প পদ্ধতিতে সড়ক মেরামত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। যেখানে জোয়ারের পানি উঠে ওইখানে আমরা আপাতত ব্রিকসের সলিং করে দেবো। এতে সড়কটি কিছুদিন হলেও ভালো থাকবে।
তিনি আরও বলেন, কার্পেটিং করার আগ পর্যন্ত সড়কের যে সব স্থানে গর্ত হয়েছে সেগুলো মেরামত করে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের একটি টিম ওই সড়কে সার্বক্ষণিক থাকবে। কোথাও গর্ত হলে তারা সেটি মেরামত করে দেবেন বলে জানান তিনি।