খুলে দেওয়া হচ্ছে থানচির বড়মদকের ঝুলন্ত সেতু

দুর্গম থানচি এলাকায় সাঙ্গু নদীর ওপর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছে দৃষ্টিনন্দন একটি ঝুলন্ত সেতু। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণের ফলে এর দুই দিকের কয়েক হাজার মানুষের সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে। লাঘব হয়েছে নানা দুর্ভোগের। সেতুটি উদ্বোধন করতে বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বড়মদক যাবেন। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করবেন তিনি।

বান্দরবানের থানচি উপজেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন রেমাক্রী। এ ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বড়মদক। থানচি সদর থেকে সাঙ্গু নদীপথে বড়মদকে নৌকায় যেতে সময় লাগে কমপক্ষে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। রেমাক্রী ইউনিয়ন থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। আর বান্দরবান সদর থেকে সড়ক ও নদীপথে যেতে সময় লাগে প্রায় পুরো দিন। সেখানে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও পৌঁছেনি। 

Bandarban thanci bridge news pic-5পার্বত্য জেলা পরিষদের তথ্য মতে, ২০১৯-২১ এই দুই অর্থবছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের এক কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নের বড়মদকে সাঙ্গু নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১.৮ মিটার প্রস্থের দৃষ্টিনন্দন এ ঝুলন্ত সেতুটি। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুলন্ত সেতু। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মি ইউটি মং-এর লাইসেন্সে কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন ঠিকাদার মংউয়েনু মারমা।

থানচির স্থানীয় সাংবাদিক অনুপম মারমা জানান, সাঙ্গু নদীর ওপর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুলন্ত এই সেতু নির্মাণের কারণে বড়মদক বাজারের ওপারে নাসালাংপাড়া, বাসিংঅং পাড়া, চাইশৈউপাড়া, উসামংপাড়া, অংগি খুমী পাড়া, উসাথোয়াইপাড়া, নারেসা পাড়া, য়ংনং ম্রো পাড়া, সাঅং কারবারীপাড়া, পাতোয়া ম্রো পাড়া, জুগিরাংপাড়াসহ প্রায় ১৫টির বেশি পাড়ার মানুষ যাতায়াতের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

তিনি বলেন, ‘এটি তৈরির আগে পাড়ার লোকজন বর্ষাকালে পানি বেশি থাকায় কষ্ট করে নদী পার হতো। বর্তমানে এ ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করায় ১৫ পাড়ার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ সেতুটি ব্যবহার করতে পারবে।’

Bandarban thanci bridge news pic-2ঠিকাদার মংউয়েনু মারমা বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এমন জায়গায় এত সুন্দর সেতু নির্মাণ করতে পারবো কখনও ভাবিনি। এটি নির্মাণের ফলে বড়মদকের রূপ অনেকটাই বদলে গেছে। আগে যারা অনেক কষ্টে নদী পার হয়ে এপারের বাজারে আসতেন তারা এখন সেতুটি ব্যবহার করে সহজেই এপারে আসতে পারছেন। শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে আসছে এ সেতুর ওপর দিয়ে।’

থানচির রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি বলেন, ‘ওপারের প্রায় ১৫টি পাড়ার মানুষ সেতুটি ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসার জন্য সেতুটি ব্যবহার করতে পারবে। প্রশাসন বড়মদকে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেয় না। অনুমতি দিলে এটি পর্যটকদের জন্য একটি আর্কষণীয় স্থান হবে।’

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী থোয়াইচমং মারমা বলেন, ‘বড়মদক বাজারটির ওপারে ১৪টির বেশি পাড়া আছে। নদীতে পানির স্রোত বেশি থাকায় তারা বর্ষাকালে বাজার করতে এপারে আসতে পারতেন না। এ ছাড়া বাজারে রয়েছে একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসতে পারতো না। এ সেতুটি করার কারণে তারা সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন।’