চাঁদপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান, ১১ ড্রেজার-বাল্কহেড জব্দ

ইলিশের আবাসস্থল নিরাপদ রাখতে ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টায় অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানে অংশ নিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা ও সদস্যরা। প্রথম দিনের অভিযানে তিনটি ড্রেজার ও আটটি বালু পরিবহনকারী বাল্কহেড জব্দ করার খবর পাওয়া গেছে।

মতলবে নদী ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছু বাল্কহেড বালু ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও নদী তীরে নোঙর করে রাখা হয়েছে বিপুল সংখ্যক বাল্কহেড। অভিযানের খবর পেয়ে বেশিরভাগ ড্রেজার উধাও হয়ে গেছে।

নৌপুলিশের এসআই জহিরুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত ড্রেজার তিনটি এবং বাল্কহেড আটটি জব্দ করা হয়েছে। এসব নৌযান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

নৌপুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের এসপি মো. কামরুজ্জামান বলেন, সকাল ৮টা থেকে অভিযান শুরু হয়। যেসব ড্রেজার ও বাল্কহেডের রেজিস্ট্রেশন নেই, সেগুলো জব্দ করা হচ্ছে। অভিযান চলমান রয়েছে।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও সদর উপজেলার এসি ল্যান্ড মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, এখনও অভিযান শেষ হয়নি। যেসব অবৈধ নৌ-যান জব্দ করা হবে, সেগুলো নৌপুলিশকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। নৌ-পুলিশকে আমরা চিঠি দিয়েছি। তারা এ অভিযান অব্যাহত রাখতে পারবে।

২০১৫ সাল থেকে চাঁদপুর জেলার নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বালু উত্তোলনের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র। এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে ভাঙন কবলিত মানুষ, জেলে ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিআইডব্লিউটিএ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত ও চিঠির আলোকে সরকারি সম্পদ ও ইলিশ রক্ষায় ভূমি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। 

ওই চিঠির পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে সম্পৃক্ত অবৈধ নৌযান জব্দ ও চোরাই বালু বিপণন কার্যক্রমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বালু ব্যবসায় যারা সম্পৃক্ত তাদের তিন শতাধিক নৌযান রয়েছে। সেগুলো জব্দ করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছি। তাদের লাইসেন্স আছে কিনা সেগুলো পরীক্ষা করতে হবে। তারা অবৈধভাবে বালু তুলছে। কারণ, মাটি এবং বালু উত্তোলন বিধি অনুযায়ী তা উত্তোলন করতে হবে। সেটি তারা করছে না। তাই আইন অনুযায়ী তাদের গ্রেফতারের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ অ্যাকশন নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এখানে যেহেতু পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে তাই অধিদফতরকে আদালত চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।