নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাবার কোলে থাকা শিশু তাসফিয়া আক্তার জান্নাতকে (৪) গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনরা ২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চৌমুহনী-ফেনী সড়কের সোরেগো পুল এলাকায় অবরোধ করেন।
এ সময় তারা শিশু জান্নাত হত্যা ও সন্ত্রাসী হামলার বিচার দাবি করে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে চৌমুহনী-ফেনী সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বেগমগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন। এদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তারা হলেন- উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত নূর নবীর ছেলে এমাম হোসেন স্বপন (৩০), লতিফপুর গ্রামের সামছুদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন বাবর (২৩) ও একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে দাউদ হোসেন রবিন (১৭)। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
এর আগে, বুধবার বিকাল ৪টায় বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মালেকার বাপের দোকান নামক স্থানে সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরের (৩৭) কোলে থাকা তিন বছরের শিশু জান্নাতকে শীর্ষ সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। আবু জাহের উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের রাশেদ মিয়ার বাড়ির মৃত জানু সরদারের ছেলে।
নিহতের মামাতো ভাই স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন দাবি করেন, ‘বাদশা নামের একজন ওই জায়গা থেকে ছয় ফুট মাটি কাটে। এরপর আরও মাটি কাটতে গেলে আমাদের বাড়ির লোকজন তাকে বাধা দেয়। মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে, সন্ত্রাসী রিমন ও তার সহযোগীদের নিয়ে বাড়িতে এসে গোলাগুলি করে এবং আমার অন্তঃসত্ত্বা ভাগ্নির পেটে লাথি দেয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই নারীকে প্রথমে চিকিৎসা দিতে বলে।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘মাটি কাটার বিরোধের জেরে বুধবার বিকাল ৪টায় সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য রহিম, মহিন, সুজনসহ ১০-১৫ জন অস্ত্রধারী মালেকার বাপের দোকানে এলাকায় অবস্থিত আমার দোকানে এসে গালিগালাজ করে। ওই সময় আমার মামা আবু জাহের তার মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে দোকানে আসেন চিপস আর চকলেট কিনে দেওয়ার জন্য। সন্ত্রাসী রিমন মামাকে আমার দোকানে দেখে গালমন্দ করে বলেন, তোর শেল্টারে এরা এসব করছে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে এবং জান্নাতকে ইট দিয়ে আঘাত করে। এরপর মামা দোকান থেকে দ্রুত বের হয়ে বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা পেছন থেকে পুনরায় জান্নাতকে এবং মামাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে জান্নাত মাথায় ও কানে গুলিবিদ্ধ হয় এবং মামা চোখে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টায় জান্নাত মারা যায়।’
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাসফিয়া আক্তার জান্নাতকে বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
বেগমগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, ‘সেহরির সময় নিহতের লাশ ঢাকা থেকে নোয়াখালী পৌঁছায়। দুপুরে তার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকালে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’