উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতিকে যুগ্ম আহ্বায়ক করায় পদত্যাগ

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্যঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন ১নং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর আহাম্মদ চৌধুরী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাত ৯টায় নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও সহিদ উল্লাহ খান সোহেল স্বাক্ষরিত পত্রে সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সদ্যঘোষিত এই কমিটি থেকে আরও কয়েক নেতা পদত্যাগ করতে পারেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘোষিত কমিটিতে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমকে আহ্বায়ক ও পাঁচ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। তারা হলেন- জাফর আহাম্মদ চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহার উল্লাহ বাহার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক শওকত হোসেন কানন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর টিপু।

লাইভে এসে জাফর আহাম্মদ চৌধুরী দাবি করেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম নেতাকর্মী চেনেন না। তিনি সময় দিতে পারেন না এবং চেষ্টাও করেন না। তার ব্যর্থতার কারণে সেনবাগে বর্তমানে দলের ভালো লোক, ত্যাগী, সৎ লোক অবমূল্যায়িত হতে হতে অনেকে ঘরে ঢুকে গেছে। সেনবাগে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একজন দলীয় প্রার্থী ছাড়া কেউ নির্বাচিত হতে পারেননি। আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি। আমরা দলের ত্যাগী নেতাদের চাই। তিনি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। পরে ব্যক্তিগতভাবে ওনার ডিউ লেটার দিয়ে উনি তদবির করে কিছু লোককে নমিনেশন দেন। নমিনেশন সঠিক হয়নি বিধায় একজন ছাড়া বাকিরা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হতে পারেননি। আমাদের মেয়র নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আবু জাফর টিপুকে মনোনয়ন দেন। সেখানে দেখা গেছে, উনিসহ (মোরশেদ আলম) কিছু লোক দলের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচিত করে।’

তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের দলের ভাবমূর্তি অনেক লস হয়ে গেছে। যেটা আমরা ঠিক করতে পারবো না। এত ব্যর্থতার পরও কালকে (মঙ্গলবার) জেলা আওয়ামী লীগ থেকে একটা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটিতে এমপিকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আমরা যতটুকু জানি, এক উপজেলার লোক অন্য উপজেলায় এমপি হতে পারে। তবে এক উপজেলার লোক আরেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বা সভাপতি হতে পারে? এটা আমার জানা ছিল না। অন্য উপজেলা থেকে হাওলাত করে এনে বানানোর অর্থ হলো সেনবাগ আওয়ামী লীগে নেতৃত্বে যোগ্যতা বলে নেই। সেনবাগে দুই লাখ ৯ হাজার ভোটার আছে। একজন লোকও কী আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করার যোগ্যতা নেই?’

তিনবারের সাবেক এই উপজেলা সভাপতি বলেন, ‘অন্য উপজেলার লোক এনে সেনবাগ উপজেলার আহ্বায়ক বানানোর পর আমি মনে করি, আমরা যারা সেনবাগে আওয়ামী লীগ করি তারা আজ লজ্জিত। মানুষ আমাদেরকে ধিক্কার দিচ্ছে, সেনবাগে যোগ্যতাপূর্ণ লোক না থাকায় অন্য উপজেলা থেকে হাওলাত করে লোক এনে আজকে আহ্বায়ক বানাইছে। যেখানে আমি কাউন্সিলর ভোটে পরপর তিনবার উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি। গতকাল যে কমিটি হয়েছে সেখানে হয়তো আমাকে রাখবে না হয় বাদ দেবে। আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তা না করে আমাকে আহ্বায়ক কমিটির ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক বানিয়ে কমিটি ঘোষণা করছে। এটা আমি লজ্জিত বোধ করছি। কারণ একজন তিনবার সভাপতি হওয়ার পর সে কী করে ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক হতে পারে? আমি মনে করি এটি সঠিক নয়। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম-আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’

এখানে উল্লেখ্য যে, সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায়। এই বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, ‘লাইভে এসে জাফর আহাম্মদ চৌধুরীর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার ভিডিও আমি দেখেছি। দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত লিখিত কোনও পদত্যাগপত্র আমরা পাইনি। পেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’