‘পদ্মা সেতু থেকে দেশবাসীর দৃষ্টি সরাতে নাশকতা কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে’

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে সারা দেশের মানুষের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। এই আনন্দ উল্লাসকে অবদমিত করতে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে নাশকতা করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি দেশের ভাবমূর্তি এবং রফতানি বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে করা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

সোমবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। 

এর আগে বিকালে বিএম কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন করেন তিনি। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে যান। এ সময় বার্ন ইউনিটে রোগীদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন তিনি।

তার সঙ্গে ছিলেন চমেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ শা‌হেনা আক্তার, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন প্রমুখ।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা জানেন পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার পর এবং সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার পর দেশে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে। কোনও কোনও জায়গায় বিশৃঙ্খলা করা হয়েছে। সেটির ধারাবাহিকতায় দেশবাসীর দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনার পেছনে কোনও নাশকতা আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোকে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বলে সংবাদ প্রকাশ করে অপসাংবাদিকতা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোনও কোনও গণমাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়েছে, ওই কনটেইনার ডিপোটি একজন আওয়ামী লীগ নেতার। আমি খোঁজ নিয়েছি, আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের ওই ডিপোতে মালিকানা মাত্র পাঁচ শতাংশ। ৯৫ শতাংশের কথা না বলে পাঁচ শতাংশের মালিককে ডিপোর মালিক দেখিয়ে যারা নিউজ করছেন, আওয়ামী লীগ নেতার ডিপো বানানোর চেষ্টা করেছেন, সেই সাংবাদিকতা সঠিক হয়নি। অপসাংবাদিকতা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী প্রশাসন এবং আমাদের দলের সমস্ত পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যা কিছু করা প্রয়োজন সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী সিভিল প্রশাসন এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো এগিয়ে এসেছে। আমাদের দলের সমস্ত পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও কাজ করছেন।’ 

‘এ কারণে যাদের রক্ত প্রয়োজন তাদের রক্তের অভাব হয়নি, যে বডি-ফ্লুইড দরকার সেটিরও কোনও অভাব হয়নি, যদিও এত বড় একটা দুর্ঘটনায় এগুলো অভাব হতে পারতো। কিন্তু সবাই এগিয়ে এসেছে বিধায় অভাবটি হয়নি’- যোগ করেন হাছান মাহমুদ।

বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্য ‘স্বাস্থ্য খাতসহ সবক্ষেত্রে ব্যর্থ সরকার’- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেবের ইদানীংকালের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে তার একটু চিকিৎসার দরকার আছে। তিনি সজ্ঞানে নাকি আধাচেতন অবস্থায় কথা বলেছেন, যেটা গয়েশ্বর বাবু বলেন। সেটা আমি জানি না।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যদি ভালো না হতো, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক নাম্বার হতো না, সমগ্র পৃথিবীতেও শীর্ষস্থানীয় হতো না। এই দুর্ঘটনার পর স্বাস্থ্যকর্মীরা, চিকিৎসকরা এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, এটি অভাবনীয়।’

‘মির্জা ফখরুল সাহেব দুর্ঘটনা না দেখে ঠাকুরগাঁও বসে মুখস্থ বক্তব্য দিয়ে দিলেন, কিন্তু কই তাদের কোনও নেতাকর্মী তো এখানে ছুটে আসেননি, রক্ত কিংবা ফ্লুইড দেওয়ার জন্য তাদের কাউকে দেখা যায় না, সব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই ছুটে এসেছেন’, উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।