পদ্মা-মেঘনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, আটক ১৬

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে নৌ-পুলিশ। এ সময় দুটি ড্রেজার, পাঁচটি বাল্কহেডসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার (২৯ জুন) দুপুরে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২৮ জুন) রাত ১০টা থেকে বুধবার (২৯ জুন) সকাল পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

পুলিশ জানায়, চাঁদপুর নৌ-থানাসহ তিন-পুলিশ ফাঁড়ি যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। পদ্মা-মেঘনার আলুরবাজার, রাজরাজেশ্বর, মিনি কক্সবাজার, সফরমালীসহ শরীয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি ড্রেজার ও পাঁচটি বাল্কহেড জব্দ করা হয়। এ সময় ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনায় আইনে মামলা করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি সম্পদ রক্ষায় নৌ-পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট আছে। অবৈধ ড্রেজার ও বাল্কহেডের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হবে। সেই সঙ্গে ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশনে যাবো। তদন্ত সাপেক্ষে মালিক এবং আরও যারা এ কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

প্রসঙ্গত, মেঘনা নদীতে (চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে অবস্থিত ২১টি মৌজা এলাকা) জনস্বার্থে নিজ খরচে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালে রিট দায়ের করেছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান। ওই রিটের ওপর ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে চাঁদপুরের ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এ আদেশের সুযোগ নিয়ে বালু মহাল বিধিমালা ভঙ্গ করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কয়েক বছর ধরে পদ্মা-মেঘনার বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করা হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে ইলিশ ও নদীর জীববৈচিত্র্য। এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের তৎপরতায় বন্ধ হয় বালু উত্তোলন। এরই মধ্যে গত ৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের পরিপেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খানকে মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনে অনুমতি দিতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন তা স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। কিন্তু চক্রটি বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখতে তথ্য গোপনসহ নানা কৌশল নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করলেও শুনানি শেষে ২৪ মে সরাসরি মামলা খারিজ করে দেন আদালত। এরপর বালু উত্তোলনকারীরা গা ঢাকা দিলেও সুযোগ পেলেই রাতের অন্ধকারে চাঁদপুর নদী অঞ্চলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মালিকানাধীন বেশ কিছু ড্রেজার মেশিন।