পাহাড়ে সক্রিয় ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা’, এক মাসে ১০ বাংলাদেশি অপহরণ 

টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে পুলিশি তৎপরতা বাড়ায় ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা’ স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গম ওই পাহাড়ি এলাকা থেকে তারা অপরাধমূল কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদক চোরাচালানসহ স্থানীয় এবং রোহিঙ্গাদের অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ হাতিয়ে নিচ্ছে এসব অপরাধীরা। গত দুই দিনে বাহারছড়া এলাকা থেকে স্থানীয় চার জন অপহরণ হয়েছেন। আর এক মাসে অপহরণের শিকার হয়েছেন ১০ জন। এসব ঘটনায় এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় পাঁচ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি আরসার (আগের নাম আল-ইয়াকিন) নাম ব্যবহার করে অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। 

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, আরসার অস্তিত্ব নেই। অনেক সময় সাধারণ রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। গত এক মাসে বাহারছড়া এলাকায় সাত-আটটি অপহরণের ঘটনা ঘটে। প্রায় ১০ জন স্থানীয় লোক অপহরণের শিকার হন। তবে সব ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ পৌঁছেনি। স্থানীয়রা মুক্তিপণ দিয়ে স্বজনদের মুক্ত করেন। 

এপিবিএন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের সাত মাসে রোহিঙ্গা শিবিরসহ টেকনাফের বাহারছড়া এলাকায় অর্ধশতাধিকের মতো অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশিরভাগ অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর আটটি মামলায় ১০ জন অপহরণকারীকে গ্রেফতারও করা হয়। এর মধ্য বাহারছাড়া এলাকায় গত এক মাসে আটটির মতো অপহরণের ঘটনায় পাঁচ জন অপহরণকারী গ্রেফতার হয়েছে।  

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টেকনাফে থেকে ৪১ কিলোমিটার দূরে বাহারছাড়ার পাহাড়ি এলাকায় নোয়াখালীপাড়ার অবস্থান। তার পাশে রয়েছে মারিশবুনিয়া, ডেইল পাড়া, বাঘগুনা ও কোনাপাড়া। এসব গ্রামে সাড়ে ২০ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের বসতি অধিকাংশ পাহাড়ি অঞ্চলে। হঠাৎ অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এসব এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। 

সর্বশেষ রবিবার (৩১ জুলাই) সকালে ওই এলাকায় মো. ইলিয়াছ ও সৈয়দ আহমদ নামে স্থানীয় দুই জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়। এর আগের দিন নোয়াখালীপাড়ার মোহাম্মদ মুবিনুল ও মোহাম্মদ নূর নামে আরও দুই জনকে অপহরণের পর ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা’ মুক্তিপণ দাবি করে স্বজনদের কাছে। তবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অপহৃতরা কেউ উদ্ধার হয়নি। 

তবে এসব ঘটনার অধিকাংশ মাদকের লেনদেনের কারণে ঘটছে বলে দাবি করেছেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাহারছড়ায় অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তবে মাদক লেনদেনের কারণে ওই এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় স্থানীয়রা নিজেই এসব সমস্যার সমাধান করেন। যে সব ঘটনা পুলিশের কাছে আসে না।’ 

স্থানীয় হুমায়ুন কবির ও মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে এপিবিএনের অভিযান জোরদার হলে পাহাড়ে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। তারা সেফজোন হিসেবে বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকা ব্যবহার করছে। এ কারণে হঠাৎ করে মাদক পাচারসহ অপহরণের ঘটনা বেড়েছে। প্রতিনিয়ত তারা পাহাড়ে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। আমরা এখানে কেউ নিরাপদ নই। অনেকে রাতে ঘর ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন।’ 

জানতে চাইলে টেকনাফ বাহারছড়া ইউপির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন বলেন, ‘সম্প্রতি অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ গ্রামের ২০ হাজারের বেশি মানুষ ভয়-ভীতির মধ্যে রয়েছে। গত এক মাসে সাত-আটটির মতো ঘটনায় স্থানীয় ১০ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন।’   
 
অন্যদিকে এপিবিএন-১৬-এর অধিনায়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এলাকায় সাত মাসে ৩০টি অপহরণের ঘটনায় দুই জন বাংলাদেশিসহ ৩৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পাঁচটি মামলায় সাত অপহরণকারীকে গ্রেফতারও করা হয়।  ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, বেশির  ভাগ অপহরণ মাদকের কারণে ঘটেছে।’