বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর সম্পদ ক্রোকের সাইনবোর্ড উধাও

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ির ক্রোককৃত সম্পত্তিতে লাগানো সাইনবোর্ড উধাও হয়ে গেছে। কে বা কারা ওই সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলেছে তা বলতে পারছেন না এলাকাবাসী। 

২০১৪ সালে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ৬ নম্বর পূর্ব বড়কুল ইউনিয়নের সোনাইমুড়ী গ্রামে রাশেদ চৌধুরীর ১ একর ১৫ শতাংশ সম্পত্তিতে সাইনবোর্ড ও লাল নিশানা লাগিয়ে ক্রোক করে নেয় উপজেলা প্রশাসন।

রাশেদ চৌধুরীর ভাতিজা আরেফিন ফয়সাল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানে রাশেদ চাচার কেউ থাকে না। তার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। উপজেলা প্রশাসন তার ১ একর ১৫ শতাংশ জমি ক্রোক করেছে বলে জেনেছি। তবে প্রশাসনের লাগানো সাইনবোর্ড কে খুলে নিয়েছে তা বলতে পারছি না।’

ওই এলাকার বাসিন্দা আহসান হাবীব বলেন, ‘রাশেদ চৌধুরী শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেনি। ১৯৭৫ সালের ২ আগস্ট রাতে আমার বাবা আব্দুল লতিফ মাস্টারকেও স্কুল সংক্রান্ত বিষয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছিল। আফসোস স্বাধীনতার এত বছর পরও খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা গেলো না।’

একই কথা বলেছেন মরহুম আব্দুল লতিফ মাস্টারের স্ত্রী ও ছোট মেয়ে নাছিমা আক্তার। তারা বলেন, প্রবাসী ভাইদের সহযোগিতা নিয়ে হলেও অবিলম্বে খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।

হাজীগঞ্জের ৬ নম্বর পূর্ব বড়কুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. শামসুদ্দিন মিয়াজী বলেন, অবিলম্বে খুনি রাশেদ চৌধুরীকে খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে আমাদের ইউনিয়নকে তথা সমগ্র দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে কিছুদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। যতটুকু জেনেছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ক্রোক আদেশ বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ। এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে নতুন কোনও নির্দেশনা থাকলে তা আমি বাস্তবায়ন করবো।’

তিনি বলেন, ‘আট বছর আগে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা হয়তো সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলেছে। ওই জমিতে দ্রুতই সাইনবোর্ড টাঙানো হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে ক্রোক আদেশ বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ফাইলপত্র সবকিছু মন্ত্রণালয়ে আছে। আমাদের নিজস্ব কাজের ফাইল আমাদের কাছে থাকে। কাজেই এটি নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। তাছাড়া জমির খতিয়ান এসিল্যান্ড অফিসে আছে। ওই সম্পত্তি নির্ধারিত। সম্পত্তি এখন আর বিক্রি বা অন্য কিছু করা যাবে না।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল হাজীগঞ্জে জব্দকৃত ১ একর ১৫ শতাংশ জমিতে সাইনবোর্ড ও লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন। 

তৎকালীন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনা আফরোজা বলেন, রাশেদ চৌধুরীর বাবার ৯ একর ২৫ শতাংশ জমির মধ্যে তার প্রাপ্ত ১ একর ১৫ শতাংশ জমি জব্দ করা হয়েছে। সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ পাওয়ার পর প্রথমে তার পরিবারের সম্পদ শনাক্ত করে উপজেলা প্রশাসন। রাশেদ চৌধুরীর বাবা শিহাব উদ্দিন চৌধুরীর সম্পত্তির ওয়ারিশ তার আট ছেলে ও এক মেয়ে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত পলাতক আসামিদের বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ শাখা থেকে একটি নির্দেশ আসে। রাশেদ চৌধুরীর সম্পত্তি জব্দের ওই নির্দেশপত্রে স্বাক্ষর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ শাখা বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-১-এর স্মারক নং ৭৮৩ ও ৭৮৪ অনুসারে, হাজীগঞ্জ উপজেলার সোনাইমুড়ী ২৪৬ মৌজার নাল, বাগান, ভিটি ও পুকুরে ১৩৬ নম্বর খতিয়ানে ৯.২২৫০ একর সম্পত্তি রয়েছে রাশেদ চৌধুরীর বাবা মৃত শিহাব উদ্দিন চৌধুরীর নামে। ওই হিস্যা অনুযায়ী রাশেদ চৌধুরীর নামে ১ একর ১৫ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে।