‘প্লাস্টিক বর্জ্যে মারাত্মক পরিবেশ ঝুঁকিতে কক্সবাজার’

প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজার মারাত্মক পরিবেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিদিন কক্সবাজার শহর থেকে প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের ১২৪ টন বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের দূষণ কমিয়ে কক্সবাজারকে আধুনিক শহরে গড়ে তোলা সম্ভব। তা না হলে বিষাক্ত রাসায়নিক মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে সিঙ্গেল প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, সাগর ও নদ-নদীকে প্লাস্টিক দূষণ মুক্ত রাখা এবং সচেতনতার ওপর জোর দেওয়া হয়। একইভাবে প্লাস্টিকের বদলে পাটজাত প্যাকেট উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পরিবেশবিদরা।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার শহরে একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ অংশীদারজনদের নিয়ে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সামুদ্রিক জীবন এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতর কর্মশালা আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ।

প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রানালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘প্লাস্টিকের দূষণ সাগরে গিয়ে যাতে সুনীল পানি নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের উচিত নিজেকে বদলানো। নিজে পরিবর্তন হলে সমাজ ও দেশ পরিবর্তন হবে।’

প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ অংশীদারজনদের নিয়ে শনিবার কক্সবাজার শহরে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মৌলিক আইন সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে (পঞ্চদশ সংশোধনী)। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের মেন্ডেট হলো, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বণ্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করা। আর এ কাজটি করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণায় হলো পরিবেশ, বন ও জলবায়ুু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদফতর হলো পরিবেশ অধিদফতর।’

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ বলেন, ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টির ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদনকারী সকল কারখানা এবং এক বছরের মধ্যে উপকূলীয় সিঙ্গেল প্লাস্টিক (এসইউপি) পরিবহন, বিক্রয়, ব্যবহার, বাজারজাতকরণ বন্ধসহ একই সময়ের মধ্যে হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্টেও এর ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’

অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘কক্সবাজার পর্যটন এলাকায় হওয়ায় প্লাস্টিক বর্জের জন্য পরিবেশের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব বর্জ্যের বিষাক্ত রাসায়নিক মানবদেহে ক্ষতি হতে পারে। তাই, প্লাস্টিক বর্জ্য সম্পর্কে স্থানীয় সবার উপর সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন।’

বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত বলেন, ‘কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে প্রতিদিন শতকরা ৭৮ শতাশ প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিক দূষণ রোধে পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্ষেত্রে উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে পর্যটন স্পটে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে বিভিন্ন পেশার নাগরিক, সরকার বেসরকারি খাতসহ তরুণদের প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদফতরের বজ্য ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন, ইউনিডো বাংলাদেশের পরিচালক ড. জাকিউজ্জামান, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের স্পেশালিস্ট বুশরা নিশাত, কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম তারিকুল আলম ও কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের ও বিভিন্ন দফতর, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ প্রতিনিধিসহ অনেকে।

কর্মশালার শুরুতে পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী আবু তাহেরের স্বাগত বক্তব্য দেন। এরপর প্লস্টিক দূষণের ওপর তিনটি প্রবন্ধ ও ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।