তিনি ইউপি সচিব আবার কলেজের প্রভাষক, দুদকের মামলা

কানু কুমার নাথ (৫৮) দীর্ঘদিন ধরে দুই পদে চাকরি করছেন। একটি চাকরি করছেন হাটহাজারী উপজেলার ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে। অপরটি ফটিকছড়ি উপজেলার হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে। এভাবে তিনি সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেছেন ৫০ লাখ টাকার বেশি।

বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অবহিত হওয়ার পর তদন্তে মিলেছে সত্যতা। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) কুমার নাথের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম এ মামলা করেন।

মামলায় তার বিরুদ্ধে একসঙ্গে দুটি পদে কর্মরত থেকে সরকারি কোষাগার (কলেজ থেকে গৃহীত) থেকে মোট ৫০ লাখ ৫৭ হাজার ২৩৯ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কানু কুমার নাথ মীরসরাই থানার খাজুরিয়া গ্রামের বিনোদ বিহারী নাথের ছেলে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কানু কুমার নাথ ১৯৯১ সালে হাটহাজারী উপজেলার ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে যোগদান করেন। এর দুই বছর পর ১৯৯৪ সালের ৫ মে ফটিকছড়ি উপজেলার হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি ১৯৯৫ সালের ১ জুন কলেজে এমপিওভুক্ত প্রভাষক হওয়ার সময় আগের চাকরির তথ্য গোপন করেন। ২০০২ সালে একই কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিও পেয়ে যান তিনি। তার কলেজ ইনডেক্স নং-৪১১০৯০।

CTG 1

এজাহারে আরও বলা হয়, একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিষয়ে সরেজমিনে অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কলেজের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কলেজের তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে তদন্ত শেষে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র মূলে দেখা যায়, কানু কুমার নাথ হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজে ১৯৯৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি খাত (কলেজ থেকে গৃহীত) থেকে বেতন-ভাতা বাবদ মোট ৫০ লাখ ৫৭ হাজাট ২৩৯ টাকা উত্তোলন করেছেন। একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সরকারি তহবিল থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন-সংক্রান্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। বিষয়টি স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০১১-এর বিধি ৩৩-এর উপবিধি ১(গ) ও ২(চ)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্থানীয় সরকার শাখা, চট্টগ্রামের বিভাগীয় তদন্তকালে প্রমাণিত হয়েছে। পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। যার মামলা নং-০১/২০২১। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়তাকে নিম্ন বেতন স্কেলে অবনমিত করে।

২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে কানু কুমার নাথ ইউপি সচিব হিসেবে হাটহাজারী মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদে এখন পর্যন্ত কর্মরত আছেন।

এ প্রসঙ্গে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কানু কুমার নাথ নামে এক ব্যক্তি একসঙ্গে দুই পদে চাকরি করছেন। একসঙ্গে দুটি পদে কর্মরত থেকে সরকারি কোষাগার (কলেজ থেকে গৃহীত) থেকে মোট ৫০ লাখ ৫৭ হাজার ২৩৯ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।