চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট, শিল্পকারখানায় উৎপাদনে ধস

দিন দিন গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। শিল্প কারখানা, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন এবং বাসাবাড়িতে কমেছে গ্যাসের সরবরাহ। অনেক বাসা বাড়িতে দিনের অর্ধেক সময় গ্যাস থাকছে না। গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে শিল্পকারখানা মালিকদের।

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে মিলছে মাত্র ২৬০ থেকে ২৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার প্রায় অর্ধেক গ্যাস সংকট রয়েছে চট্টগ্রাম। যে পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে এরমধ্যে চট্টগ্রামের সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বাকিটা সরবরাহ করা হচ্ছে চট্টগ্রামের শিল্পকারখানা, সিএনজি ফুয়েলিং স্টেশন, বাণিজ্যিক এবং আবাসিকসহ সবগুলো খাতে।

চট্টগ্রামে প্রায় ৭০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশন দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এ কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হচ্ছে।

চট্টগ্রামের মুরাদপুর সঙ্গীত এলাকার গৃহিণী মরিয়ম আক্তার। তিনি জানান, সোমবার (১৪ নভেম্বর) থেকে ওই এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। সকাল পৌনে ১০টায় গ্যাস বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর দেড়টায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। একইভাবে বিকালেও কয়েক ঘণ্টা গ্যাস থাকছে না। এ কারণে রান্নায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

গ্যাস সংকটের কথা জানিয়েছেন নগরীর বাদুরতলা আরাকান হাউজিং সোসাইটি এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম। তিনি জানান, এখানে গত কয়েকদিন ধরে গ্যাস সংকট বেড়েছে। অনেক সময় চুলা জ্বলে মিটমিট করে। রান্না করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এছাড়া গ্যাস সংকট রয়েছে বাকলিয়া থানার সৈয়দশাহ রোডসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসেস অপারেশন ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সব মিলিয়ে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) এবং চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট করে মোট ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। অপরদিকে শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুটসহ সরকারি এ তিনটি প্রতিষ্ঠানে মোট ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দৈনিক ৫ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। শিল্প কারখানায়ও চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না।’

চট্টগ্রামের বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা কেএসআরএম’র সিনিয়র জিএম মো. জসিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন কমেছে। উৎপাদন কমার আরও কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, ব্যাংকে এলসি খোলা যাচ্ছে না। এ কারণে কাঁচামাল সংকট দেখা দিয়েছে। কাঁচামালের সংকটে উৎপাদন কমেছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় উৎপাদিত পণ্যের ওপর ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে লোহার দাম বাড়ছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর সিএনজি অটোরিকশা অটোটেম্পু মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক টিটু চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলো সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত যানবাহনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। তার ওপর দিনের অন্যান্য সময়েও বিদ্যুৎ না থাকায় গ্যাস নিতে সমস্যায় পড়তে হয়। এ কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে যানবাহনে গ্যাস নিতে হচ্ছে।’