চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ সরিষা চাষ, ভালো ফলনের আশা

ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সারা দেশে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ সরিষা আবাদ হয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, ‘সরিষা চাষে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ। এ কারণে জেলায় সরিষা চাষ বেড়েছে। ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা আবাদে জোর দিয়েছেন তারা।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এক বছর আগেও চট্টগ্রামে এক হাজার হেক্টরের কম জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। এবার তা বেড়ে দুই হাজার ৩৪২ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। সরিষা চাষিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বিনামূল্যে বীজ। ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ সরিষা আবাদ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর চট্টগ্রামে এক হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দুই হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মীরসরাইয়ে ৮০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষাবাদ হয়েছে ৩২০ হেক্টর। এছাড়া সীতাকুণ্ডে ১৭০, ফটিকছড়িতে ২৫২, হাটহাজারীতে ৪৪২, রাউজানে ৩৭৫, রাঙ্গুনিয়ায় ২২০, বোয়ালখালীতে ৫০, পটিয়ায় ৭২, কর্ণফুলীতে ১০, আনোয়ারায় ৯২, চন্দনাইশে ৫২, লোহাগাড়ায় ৯২, সাতকানিয়ায় ১০৮, বাঁশখালীতে ২৫, সন্দ্বীপে ৬০, পাঁচলাইশে এক ও পতেঙ্গায় এক হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।

জেলায় চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আক্তারুজ্জামান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ফলন ভালো হয়েছে। সরিষার একাধিক জাত চাষ হয়েয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭ ও বিনা সরিষা-৯ জাতের চাষাবাদ বেশি হয়েছে। হেক্টরপ্রতি এক দশমিক দুই টন ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

রাউজানের চিকদাইর, নোয়াজিষপুর, ডাবুয়া, হলদিয়া, রাউজান সদর, উরকিরচর, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা, বিনাজুরী, কদলপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে।

এ বিষয়ে রাউজান উপজেলার ডাবুয়া এলাকার কৃষক নুরুর ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। এবার বিনামূল্যে সরিষার বীজ পেয়েছি। প্রায় ৮০ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। ফলন ভালো পাওয়ার আশা করছি। ৮০ শতকে চাষাবাদে প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রতি কেজি সরিষা ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। সেইসঙ্গে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে পারবো।’

ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা আবাদে জোর দিয়েছেন কৃষকরা

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমরান হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার রাউজানে তিনগুণ সরিষা আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। উপজেলার এক হাজার ৮০০ কৃষককে বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি অনেকে নিজস্ব বীজ চাষাবাদ করেছেন। এজন্য গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ সরিষা আবাদ হয়েছে।’

শতকপ্রতি আট কেজি সরিষা পাওয়া যাবে জানিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। সে হিসাবে রাউজানে ১৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে সরিষার ফলন উঠতে শুরু করবে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ফলন তোলা শেষ হবে। উপজেলায় তেল উৎপাদনের জন্য দুটি ঘানি রয়েছে। তেল উৎপাদনের পর সরিষার খৈল বিক্রি করা যাবে। এতে কম পুঁজিতে লাভবান হবেন কৃষকরা।’