মিয়ানমার থেকে আসা ট্রলার আটকের ঘটনায় টেকনাফ বন্দরে কর্মবিরতি

মিয়ানমার থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রলার আটকের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছে কক্সবাজারে টেকনাফ স্থল বন্দরের ব্যবসায়ীরা। ধর্মঘটের কারণে রবিবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী কার্গো ট্রলার ও জাহাজ থেকে মালামাল ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা পণ্যবাহী ট্রলারে অবৈধ চোরাচালান পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ ২ বিজিবির একটি টহলদল একটি ট্রলারটি জব্দ করেন। এ সময় পালিয়ে যাওয়া মাঝিমাল্লাসহ চার জনকে আটক করে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার।

তিনি জানান, এ সময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ট্রলারে থাকা ৫৭৪ বস্তা সুপারি ও ৮০টি কপিসহ ট্রলারটি আটক করা হয়। মামলা দিয়ে পণ্যসহ ট্রলারটি টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা দেওয়া হয়েছে। 

বিজিবির হাতে পণ্যসহ ট্রলার আটকের প্রতিবাদে ব্যবসায়ী ও আমদানি প্রতিষ্ঠানসহ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এ কর্মবিরতি পালন করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিকালে স্থলবন্দরে উপজেলা প্রশাসন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে বসে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, স্থলবন্দর জিএম অ্যাডমিন অ্যান্ড সিকিউরিটি (অব.) মেজর সৈয়দ আনছার মোহাম্মদ কাউছার, বন্দর ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আবদুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক এহতেসামুল হক বাহাদুর প্রমুখ।

বৈঠক শেষে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, স্থল বন্দরের কর্ম বিরতির খবর পেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক করে ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতি বিষয় নিয়ে কথা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ভবিষ্যতে এ ধরনের আর কোনও ঘটনা হবে না বলে ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বন্দরে একটি চক্র নানান ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের কারণে সৃষ্ট সমস্যায় সরকার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সৃষ্ট সমস্যায় সমাধানের চেষ্টা চলছে।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফ স্থলন্দরের ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেলো, বন্দরটি খাঁ খাঁ করছে। অন্যদিন এসব স্থান পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের দখলে থাকে। বন্দরে তেমন কোনও যানবাহন নেই। জেটিগুলো খালি পড়ে থাকলেও নোঙর করে রয়েছে পণ্যভর্তি একাধিক কার্গো ট্রলার ও জাহাজ।

কর্মবিরতি চলছে উল্লেখ করে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর জানান, সকাল থেকে কোনও পণ্য ওঠানামা হয়নি। বিশেষ ব্যবস্থায় পচন জাতীয় পণ্য খালাস ছাড়া হবে, বাকি সব কার্যক্রম বন্ধ।

স্থলবন্দরের শ্রমিক হেফজু রহমান বলেন, বর্তমানে স্থলবন্দরের জেটিতে বেশ কয়েকটি কার্গো ট্রলার ও জাহাজভর্তি মালামাল রয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দাবি আদায়ের জন্য রবিবার সারা দিন কাজ বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরা। কারণ, মালামাল ওঠানামা না হলে অনেকের ঘরে চুলা জ্বলবে না।

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, একটি ট্রলার আটকের ঘটনাকে কেন্দ্রে করে আজকে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।