পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনে ৬০০ ‘কারিগর’

দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনে রয়েছেন ৬০০ ‘কারিগর’। যাদের হাত ধরে শুধু চট্টগ্রামে নয়, দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এসব মধ্যস্বত্বভোগী ৬০০ কারিগরের সন্ধান পেয়েছে জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম। এসব কারিগরকে ধরতে অভিযান শুরু হবে জানিয়েছেন মনিটরিং টিমের সদস্যরা।

পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে ৬০০ সদস্যের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উমর ফারুক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূলত তারাই সব পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এই সিন্ডিকেট বাজারে প্রথমে পণ্যের ডিমান্ড অর্ডার (ডিও) ইস্যু করে। এরপর কিছু টাকা লাভে সেই অর্ডার আরেক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি দেয়। সেই ব্যবসায়ী আবার কিছু টাকা লাভে আরেক ব্যবসায়ীর কাছে রসিদ বিক্রি দেন। এভাবে ১০-১৫টি হাতবদল হয়ে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সিন্ডিকেটের পাশাপাশি আড়তদারদেরও কারসাজি আছে। ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটের ৬০০-এর বেশি মধ্যস্বত্বভোগীর নাম-মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেছি আমরা।’ 

পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার নেপথ্যের এসব কারিগরের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসনের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘এসব ব্যক্তির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করছি আমরা।’

দাম বাড়িয়ে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার নেপথ্যে ছয় শতাধিক ব্যক্তির সিন্ডিকেটের তালিকা পেয়েছেন বলে জানালেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেটের নামের তালিকা হাতে পেয়েছি। যেকোনও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হলে সিন্ডিকেটের তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হবে।’

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ডিমান্ড অর্ডার (ডিও) দায়ী বলে উল্লেখ করেছেন খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধরেন একটি পণ্য আগামী পাঁচ-ছয় মাস পর বাজারে আসবে, অথচ এখন থেকে মিল মালিকরা ডিও’র মাধ্যমে অর্থাৎ একটি বিক্রয় রসিদের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি শুরু করে দেন। আবার কখন কোন পণ্য বাজারে আসবে না, কিংবা দেরিতে আসবে তখন ডিও’র মাধ্যমে সংকট সৃষ্টি করা হয়। পাঁচ-ছয় মাস ধরে এই ডিও বিক্রি করা হয়। পণ্য হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত এটি ১০-২০ জন ব্যবসায়ীর হাতবদল হয়। সবাই কমবেশি লাভ করেন। এ জন্য পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, আবার কমে যায়। দেশের বড় বড় অনেক ব্যবসায়ী অগ্রিম ডিও ছেড়ে এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।’

বাজার স্থিতিশীল রাখতে ডিও বাতিল করতে হবে উল্লেখ করে আবুল কাসেম বলেন, ‘বিশেষ করে চিনি, তেল, ডাল, পেঁয়াজ, এলাচ ও জিরাসহ বিভিন্ন পণ্য ডিও দিয়ে বিক্রি হয়। বছরের পর বছর খাতুনগঞ্জে ডিও ব্যবসা চলছে। এটি বন্ধ করতে হবে।’

এরই মধ্যে রবিবার (২১ মে) দুপুরে খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে মূল্য তালিকা না থাকা, ক্রয়-বিক্রয় রসিদ সংরক্ষণ না করায় তিন প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরমধ্যে বার আউলিয়া ট্রেডার্সকে পাঁচ হাজার, ফরিদপুর বাণিজ্যালয়কে তিন হাজার এবং জাহেদ নামে এক বেপারীকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক।

অভিযান নিয়ে জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার। খুচরা বাজারগুলোতে কয়েক দিনের ব্যবধানে অস্বাভাবিকভাবে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নেমেছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। রবিবার অভিযানে আড়তদারদের জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়। অস্বাভাবিক দামে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্য বিক্রির অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনস্বার্থে এই অভিযান চলবে।