রাঙামাটিতে বন্যায় তিন শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু

রাঙামাটিতে টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় তিন শিশুসহ ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৫ আগস্ট থেকে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলার চার, নানিয়ারচরের একজন এবং বরকলের একজন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার বলেন, ‘৮ আগস্ট বন্যার পানিতে নিখোঁজ বাঘাইছড়ির মুসলিমব্লক গ্রামের জুয়েলের (৭) লাশ বৃহস্পতিবার বিকালে উদ্ধার করা হয়েছে। একইদিন বিকালে সাজেকের মাচালং থেকে কাওলা চাকমা (৪০), বঙ্গলতলী ইউনিয়নের করেঙ্গাতলী থেকে রাহুল বড়ুয়া (১০) ও খেদারমারা ইউনিয়নের হীরারচর এলাকা থেকে জনি চাকমার (৭) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’

বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা বিনতে আমিন বলেন, ‘গত ৭ আগস্ট বরকল উপজেলার বরকল ইউনিয়নের মাইসছড়ি গ্রামে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হন সুমেন চাকমা (১৯)। পরদিন তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’

নানিয়ারচর থানার ওসি সুজন হালদার বলেন, ‘৫ আগস্ট ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ধার্যাছড়া এলাকায় ছড়া পার হতে গিয়ে বন্যার পানিতে ভেসে যান এক্ক্যোইয়া চাকমা (৮০)। পরদিন তার লাশ উদ্ধার করা হয়।’

এদিকে, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমায় প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনও জেলার দুর্গম বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে আছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে বন্যায় ভয়াবহতা। এখনও নৌকায় চলাচল করছেন স্থানীয়রা। তবে দুর্গম এলাকায় ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বন্যাদুর্গতরা।

জেলায় ২৮টি ইউনিয়ন ও বাঘাইছড়ি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে, এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল

বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চগ্যা বলেনন, ‘উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের সাত-আট গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। বুধবার ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আজ আবার খাবার পাঠানো হয়েছে। তবু আমার মনে হয়, এগুলো পর্যাপ্ত নয়। যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আগে তাদের খাবার দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে স্থানীয় মেম্বারদের।’

বাঘাইছড়ির ইউএনও রুমানা আক্তার বলেন, ‘উপজেলার ওসব এলাকায় পানি কমলেও আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের বাড়ি ফেরার মতো পরিস্থিতি নেই। তবে বৃষ্টি আর না হলে পানি নেমে যাবে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি তাদের বাড়ি বাড়ি চাল, ডাল, তেল, আলু ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’

রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় ২৮টি ইউনিয়ন ও বাঘাইছড়ি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ১০০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু এলাকার পানি নামতে শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।’