সাঈদীর মৃত্যুতে ‘ইন্না-লিল্লাহ’ স্ট্যাটাস দেওয়ায় চাকরি হারালেন শিক্ষক

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন’ লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আবু সালেহ মো. যোবায়ের নামে এক শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি মাদ্রাসাটিতে ইবতেদায়ি শিক্ষক (গণিত) পদে অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন।

বুধবার (১৬ আগস্ট) মাদ্রাসাটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন আজাহারী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আপনি ইবতেদায়ি শিক্ষক (গণিত) হিসেবে ১২ মার্চ থেকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসায় অস্থায়ীভাবে কর্মরত। মাদ্রাসার কোনও শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। আপনি নিয়োগপত্রের ৪ ও ৬ নম্বর শর্ত ভঙ্গ করেছেন এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন বিধায় আপনাকে ১৬ আগস্ট (বুধবার) থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

শিক্ষককে বহিষ্কার প্রসঙ্গে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন (আল আযহারী) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবু ছালেহ মু. যোবায়ের মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শাখায় অস্থায়ী গণিত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি দেশের রাজনীতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতেন। সাঈদীর মৃত্যুর পর যে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা নয়, এর আগেও একাধিক বার তিনি নানা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। আমাদের মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধ। যা নিয়োগপত্রে উল্লেখ আছে। তিনি নিয়োগ বিধি ভঙ্গ করেছেন।’

অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘তার (আবু ছালেহ মু. যোবায়ের) কাছ থেকে এ বিষয় জানার জন্য অফিসে ডাকা হলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তিনি নিজ থেকেই শিক্ষকতা পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’

এদিকে, অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষকের ফেসবুক থেকে নেওয়া বেশ কিছু পোস্ট বাংলা ট্রিবিউনের কাছে পাঠিয়েছেন অধ্যক্ষ। এসব পোস্ট শিক্ষক আবু ছালেহ মু. যোবায়েরের ওয়াল থেকে নেওয়া। তবে শুক্রবার চেষ্টা করেও যোবায়েরের ফেসবুক আইডিতে প্রবেশ করা যায়নি।

এসব পোস্টে জামায়াত-শিবিরের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা যায়, ‘এর মধ্যে মোহাম্মদ হানিফ নামে এক ব্যক্তির সাঈদীর বক্তব্য শেয়ার করে যোবায়ের লেখেন, ‘এই হুজুরের বক্তব্যগুলো মনে হচ্ছে জীবন্ত বাস্তব।’ ইসলামী ব্যাংক নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদন ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ শেয়ার করে তিনি লিখেন, ‘ওহে চেতনার বাঙালি গণজাগরণের বুদ্ধিযোগী অক্কল, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর হলেও চিনে নাও জামায়াত শিবির বাংলাদেশের জন্য কী জিনিস।’ রিপন দে নামে অপর এক ব্যক্তির জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে লেখা ‘গত প্রায় ১৫ বছরে জামায়াতে ইসলামির স্থায়ী সদস্য বেড়েছে ৩ গুণ’ পোস্টটি শেয়ার করে লিখেন, ‘আমিও একমত’।

মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া মীর কাশেম আলীকে নিয়ে তিনি লেখেন, ‘বাংলার মাহথির শহীদ মীর কাশেম আলী, আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। আমিন।’ এ ছাড়াও তার জামায়াত-শিবির এবং জামায়াত নেতাদের নিয়ে তার একাধিক পোস্ট রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষক আবু ছালেহ মু. যোবায়ের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে আরটিভির অনলাইনে প্রকাশিত মৃত্যুর খবরটি শেয়ার করেছি। এতে আমি লিখেছি ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন।’ এ অপরাধে আমাকে শিক্ষকতার চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে আগে কখনও কোনও পোস্ট আমি দিইনি। আমি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। এরপরও আমাকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত বলে অপবাদ দেওয়া হয়েছে।’