এক বাজারে ৭ হাজার মণ ইলিশ, তবু কেজি ১২০০ টাকার বেশি

চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। গত ১৮-২০ আগস্ট তিন দিনে বাজারে এলো সাড়ে সাত হাজার মণ। তবু মাছ কম ধরা পড়ার অজুহাতে এক হাজারের বেশি দামে ইলিশের কেজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় ভরা মৌসুমে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার এক কেজি ইলিশের জন্য ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৫০০ টাকা। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বাজারে এসে হতাশ ক্রেতারা। 

ক্রেতারা বলছেন, ভরা মৌসুমে চাঁদপুরের ইলিশের চাহিদা থাকে বেশি। এ সুযোগে দামও বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ কম ধরা পড়ায় দাম বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।

জেলেরা জানিয়েছেন, সাগরে প্রচুর ধরা পড়লেও চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় এখনও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। নদীতে জাল ফেলে যে পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন, তাতে খরচের টাকা উঠাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। মৌসুমের বাকি সময়ে প্রচুর ইলিশ পাওয়ার আশায় রয়েছেন তারা।

ঢাকা থেকে বড়স্টেশন মাছ বাজারে ইলিশ কিনতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে হাঁটাচলা করাই কঠিন। প্রচুর ইলিশ থাকলেও দাম কমাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ভেবেছিলাম, বেশি করে ইলিশ কিনবো। কিন্তু এখানে এসে হতাশ হয়েছি। ১২০০ টাকা কেজির নিচে কোনও মাছ নেই। তাও এক কেজির নিচের সাইজের। এ জন্য অল্প পরিমাণ কিনেছি।’

মাছ কম ধরা পড়ার অজুহাতে এক হাজারের বেশি দামে ইলিশের কেজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা

একই বাজারে ইলিশ কিনতে আসা চাকরিজীবী আহাদ হোসাইন বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় ছোট সাইজের ইলিশ কিনেছি ১২০০ টাকা কেজিতে। তবে বড় মাছের দাম আরও বেশি। অন্যান্য বছর এই সময়ে মাছের দাম অনেক কম ছিল। এবার বাজারে প্রচুর মাছ থাকলেও দাম কেন বেশি, তা জানি না।’

ইলিশ ব্যবসায়ী বিপ্লব খান বলেন, ‘নোয়াখালী, হাতিয়া, চরফ্যাশন থেকে চাঁদপুর ঘাটে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। সবসময় মাছের সরবরাহ একরকম থাকে না। সরবরাহের ওপর দাম নির্ভর করে। এখন সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি। তবে সরবরাহ বাড়লে দাম এমনিতেই কমে যাবে।’

বড়স্টেশন মাছ বাজারের ব্যবসায়ী সাগর হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। হাতিয়া ও সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ নিয়ে আসছেন জেলেরা। সড়কপথে গাড়িযোগেও আসছে। শুক্রবার তিন হাজার মণ, শনিবার আড়াই হাজার মণ এবং রবিবার দুই হাজার মণ ইলিশ বড়স্টেশন বাজারে এসেছে। এসব মাছের বেশিরভাগ আধা কেজি সাইজের। তবে পদ্মা-মেঘনার মাছের সরবরাহ কম। রবিবার এই বাজারে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ এসেছে ৫০-৬০ মণ। এসব মাছের কেজি ১৫০০ টাকার ওপরে বিক্রি করেছি। অন্যান্য নদীর মাছের দাম একটু কমে বিক্রি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘পাইকারিতে ৫শ’ থেকে ৬শ’ গ্রাম সাইজের সাগরের ইলিশের মণ ৩০ হাজার, ৮শ’ গ্রাম ওজনের মণ ৩৫ হাজার, এক কেজি সাইজের ৪৫ হাজার, দেড়-দুই কেজি ওজনের মণ ৬৫-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। তবে পদ্মা ও মেঘনার মাছের মণ এর চেয়ে আরও ১০-১২ হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে। সরবরাহ বাড়লে আরও কমবে।’

গত ১৮-২০ আগস্ট তিন দিনে বাজারে এলো সাড়ে সাত হাজার মণ ইলিশ

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী সবে বরাত সরকার বলেন, ‘শুক্রবার থেকে এখানে মাছের সরবরাহ বেড়েছে। গত তিন দিনে সাড়ে সাত হাজার মণ ইলিশ এসেছে।’

তবু দাম কমছে না কেন জানতে চাইলে এই আড়তদার বলেন, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা কমেছে। সরবরাহ অনুপাতে ক্রেতা বেশি। এখন যে পরিমাণ সরবরাহ, তাতে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এখন মৌসুম শুরু হয়েছে। মৌসুমের আগামী দিনগুলোতে যখন দিনে আট থেকে ১০ হাজার মণ ইলিশ বাজারে আসতে শুরু করবে, তখন দাম কমে যাবে।’