কুমিল্লায় ছয় নতুন মুখ, চেয়ারম্যান থেকে বাজিমাত দুজনের

কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে এমপি হলেন দুই জন। বাকি সাতটিতে নৌকার প্রার্থীরা জিতেছেন। এর মধ্যে পাঁচ জন বর্তমান সংসদ সদস্য এবং দুই নতুন মুখ।

নৌকা হারিয়ে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন কুমিল্লা-২ আসনে মো. আব্দুল মজিদ, কুমিল্লা-৩ আসনে জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা-৪ আসনে মো. আবুল কালাম আজাদ ও কুমিল্লা-৫ আসনে এম এ জাহের। 

নৌকার দুই নতুন মুখ হলেন কুমিল্লা-১ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. আব্দুস সবুর এবং কুমিল্লা-৮ আসনে এ জেড এম শফিউদ্দিন শামীম। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তারা।

রবিবার (৭ জানুয়ারি) রাতে ১১ আসনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান। 

ঘোষিত ফলে নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন ছয় জন। পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচ জন। নতুনরা হলেন কুমিল্লা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুস সবুর, কুমিল্লা-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মজিদ, কুমিল্লা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা-৪ আসনে আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-৫ আসনে এম এ জাহের ও কুমিল্লা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী এ জেড এম শফিউদ্দিন শামীম। 

কুমিল্লা-১ আসনে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের আব্দুস সবুর। তিনি পেয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৭৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যারিস্টার নাঈম ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬৭৩ ভোট ।  

কুমিল্লা-২ আসনে জয়ী হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের আব্দুল মজিদ। তিনি পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৪৪০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের সেলিমা আহমাদ মেরী পেয়েছেন ৪২ হাজার ৪৫৩ ভোট।

কুমিল্লা-৩ আসনে জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকের জাহাঙ্গীর আলম। তিনি পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৯৭১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন পেয়েছেন ৭২ হাজার ১৪ ভোট। এই আসনে দুই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। দুই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা আট হাজার ১৯০।

কুমিল্লা-৪ আসনে জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকের আবুল কালাম আজাদ। তিনি পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৮০৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের রাজী মোহাম্মদ ফখরুল পেয়েছেন ৮১ হাজার ২৫৭ ভোট। এই আসনে স্থগিতকৃত এক কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা চার হাজার ২৭৬। আজাদ কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করে বিজয়ী হন।

কুমিল্লা-৫ আসনে জয়ী হয়েছেন কেটলি প্রতীকের এম এ জাহের। তিনি পেয়েছেন ৬৫ হাজার ৮১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফুলকপি প্রতীকের সাজ্জাদ হোসেন স্বপন পেয়েছেন ৬১ হাজার ৫২২ ভোট। এম এ জাহের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করে বিজয়ী হন।   

কুমিল্লা-৬ আসনে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তিনি পেয়েছেন এক লাখ ৩২ হাজার ২১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের আঞ্জুম সুলতানা সীমা পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৯৬৬ ভোট ।  

কুমিল্লা-৭ আসনে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। তিনি পেয়েছেন এক লাখ ৭৩ হাজার ৬৭৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের মুনতাকিম আশরাফ টিটু পেয়েছেন ১১ হাজার  ৬৮৬ ভোট।

কুমিল্লা-৮ আসনে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের এ জেড এম শফিউদ্দিন শামীম। তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৭২৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের ইরফান বিন তোরাব আলী তিন হাজার ৭২১ ভোট। 

কুমিল্লা-৯ আসনে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী। পেয়েছেন দুই লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ার প্রতীকের আবু বকর সিদ্দিক পেয়েছেন আট হাজার ২৬০ ভোট ।

কুমিল্লা-১০ আসনে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৩২ হাজার ৬৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের জোনাকি হুমায়ুন পেয়েছেন আট হাজার ৫৪৮ ভোট।

কুমিল্লা-১১ আসনে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের মুজিবুল হক। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। পেয়েছেন এক লাখ ৮১ হাজার ৬৭৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফুলকপি প্রতীকের মিজানুর রহমান পেয়েছেন ২২ হাজার ৭০০ ভোট। এই আসনের স্থগিত করা হয় তিন কেন্দ্রের ভোট। তিন কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ১৭ হাজার ৩৯৮।

জয়ের প্রতিক্রিয়ায় আব্দুস সবুর বলেন, ‘দাউদকান্দি ও তিতাসের মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিলেন। আমি নেত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। সবাই মিলে দাউদকান্দি ও তিতাসের উন্নয়ন করবো।’

প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়ে শফিউদ্দিন শামীম বলেন, ‘উন্নয়নবঞ্চিত বরুড়াবাসী করোনা মহামারিতে কাউকে পায়নি। আমি পাশে ছিলাম। সমাজসেবামূলক কাজ, দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ মনোবল আমাকে জয়ী করেছে। আমি নেত্রীর কাছে, দলের জ্যেষ্ঠ ও তরুণ নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’