বদলে গেছে সাগরপাড়ের ২১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়

রঙ-তুলির আঁচড়ে সেজেছে বিদ্যালয়ের ভবনগুলো, আঙিনায় শোভা পাচ্ছে নানান ফুল ও মৌসুমি সবজির ক্ষেত। সেখানে হাতে-কলমে কৃষিশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন দুপুরে পাচ্ছে ভিটামিনযুক্ত বিস্কুট, স্কুলে বাড়ছে উপস্থিতি। এমনিভাবে বদলে গেছে কক্সবাজারের তিন উপজেলার ২১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডাব্লিউএফপি) অর্থায়নে ‘স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম’ এর আওতায় সুবিধা পাচ্ছে জেলার ৬০ হাজার কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী।

কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও কুতুবদিয়া জেলার অবহেলিত ২১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬০ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে ডাব্লিউএফপি। সংস্থাটির অর্থায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে। এতে করে বদলে গেছে এসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি ভবনকে সাজিয়েছে রঙ-বেরঙে। বিদ্যালয়ের আঙিনা রাখা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ‘স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম’র আওতায় বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠাগার, স্কুল আঙিনায় কৃষি ক্ষেত ও প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি পাঠাগার, স্বাস্থ্য ও কৃষি বিষয়ে হাতে-কলমে শেখার পর বাড়িতে অভিভাবকদেরও সচেতন করার কথা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

স্কুলগুলো সেজেছে রঙ-তুলির আঁচড়ে (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

কথা হয় কক্সবাজারের উখিয়ার কামরিয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফনান জান্নাত আফরিনের সঙ্গে। সে জানায়, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সে প্রতিবেশীদেরও স্বাস্থ্য বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। কৃমিনাশক ট্যাবলেট কীভাবে সেবন করবে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, সর্দি-কাশি হলে করণীয় কী এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় করণীয় সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে। 

উখিয়ার জালিয়াপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রেজাউল করিম জানায়, সে বিদ্যালয়ের আঙিনায় সবজি চাষ সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা পেয়েছে। সবজি চাষ সম্পর্কে নিজে শিখে বাসায় গিয়ে বাবা-মায়ের সহায়তায় গড়ে তুলেছে সবজি ক্ষেত।’

সবজির চাষ হাতে-কলমে শিখছে শিক্ষার্থীরা

উখিয়ার জালিয়াপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে উক্ত প্রকল্পে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে বিস্কুট সরবরাহসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বেড়েছে।

একই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মো. আবুল কাসেম বাবুল বলেন, ‘সরকারের তদারকিতে ডাব্লিউএফপি’র সহযোগিতায় বিদ্যালয় এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার মান ও আগ্রহ বেড়েছে। অন্যান্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনা উচিত।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেড়েছে উপস্থিতির হার

ডাব্লিউএফপির কক্সবাজার স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট মোহাম্মদ আজাহারুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সাল থেকে কক্সবাজারের পেকুয়া ও মহেশখালীতে ‘স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম’ চালু হয়েছে। বর্তমানে উখিয়া, টেকনাফ ও কুতুবদিয়ার ২১০টি বিদ্যালয়ের প্রকল্প চালু আছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি এনজিও এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়িয়ে লেখাপড়ার মানোন্নয়ন করা।’

অল্পবয়সে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের আঙিনায় সবজি চাষ, পাঠাগার সংরক্ষণ ও স্বাস্থ্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।