পৌরসভা ও সড়ক বিভাগের রশি টানাটানি, জ্বলছে না ফ্লাইওভারের বাতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের রেলওয়ে ফ্লাইওভারের ওপর রাতে সড়ক বাতিগুলো জ্বলছে না। বেশ কয়েকদিন ধরে সড়ক বাতিগুলো বন্ধ থাকায় রাতের আঁধারে পথচারীদের চলাচল অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আলোর স্বল্পতার কারণে যেকোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাইকারীদের হামলার আশংঙ্কা করছেন শহরবাসী। এদিকে সড়ক বাতি জ্বালানোর দায়িত্ব নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে পৌরসভার রশি টানাটানি চলছে। তবে পুলিশ বলছে, জনস্বার্থ বিবেচনা করে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যানজট নিরসনের জন্য ২০১০ সালের ১২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক জনসভায় শহরের রেল লাইনের ক্রসিংয়ের ওপর একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। তারই অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল খ্রিস্ট্রীয় মিশন এলাকা থেকে প্রায় ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে টিএ রোড আশিক প্লাজা পর্যন্ত ৭৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থ রেললাইনের ওপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করেন। এর পরই এটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এতে শহরবাসীর ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসে।

ফ্লাইওভারটি চালুর পর গত ৭ বছর ধরে স্বাভাবিকভাবেই ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী এর ওপর দিয়ে চলাচল করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি ফ্লাইওভারটির ওপরে থাকা অন্তত অর্ধশতাধিক সড়ক বাতি জ্বলছে না। ফলে পথচারীদের চলাচলে অনেক সমস্যা হচ্ছে। এই জনপথে চলাচলকারী নাগরিকদের মাঝে দেখা দিয়েছে ছিনতাই আতংঙ্ক।

জেলা নাগরিক ফোরামের সহ-সভাপতি নিহার রঞ্জন সরকার জানান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই ফ্লাইওভারটিতে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক বাতিগুলো জ্বলছে না। যার কারণে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে পারে। ছিনতাইসহ খুন-খারাপিও হতে পারে। তিনি বলেন, বিষয়টি শহরবাসীর জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক বিভাগ আর পৌরসভা যাদেরই দায়িত্ব হোক জনগণ চায় স্বাভাবিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে। আশা করবো এ ব্যাপারটি সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব সহকারে দেখবেন এবং সড়ক বাতিগুলো স্বাভাবিকভাবে জ্বলবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের রেলওয়ে ফ্লাইওভার

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, ফ্লাইওভারটি পৌরসভার ভেতরে হওয়ায় আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। তারাও নিতে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমাদের পক্ষে এ বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিলও আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ মন্ত্রণালয় থেকে তেমন কোনও বরাদ্দ আসছে না।

অপরদিকে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সবুজ কাজী জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে দেওয়া চিঠি আমরা গ্রহণ করিনি। আমাদের পর্যাপ্ত এবং প্রয়োজনীয় লোকবল এবং যন্ত্রপাতি নেই। বিষয়টি আমরা সড়ক বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছি। এছাড়া সড়ক বাতি মেরামতের জন্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই এই পৌরসভার।

তিনি আরও জানান, বাতির প্রতিটি পিলারের উচ্চতা ৩০ ফিট। আমাদের কাছে মই আছে ২৫ ফিটের। এছাড়া প্রতিটি বাতি রক্ষণাবেক্ষণ করতে গেলে খরচ হয় চার থেকে পাঁচশত টাকা। গরিব পৌরসভার পক্ষে এই ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই দায়িত্ব এখনও সড়ক বিভাগের হাতেই রয়েছে।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন জানান, ঝুঁকি বিবেচনায় আপাতত ফ্লাইওভার এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পৌরসভা এবং সড়ক বিভাগের সঙ্গে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করা হবে।