চলন্ত ট্রেনে সন্তানের জন্ম, সর্বোচ্চ সহযোগিতা রেলের কর্মী-যাত্রী ও চিকিৎসকের

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী। রবিবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তালশহর স্টেশন অতিক্রমের সময় ট্রেনের ড-বগিতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রেলের কর্মী ও যাত্রীরা ওই নারীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। বর্তমানে মা ও নবজাতক সুস্থ আছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌসের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর চিকলবাহা এলাকায়। তার স্বামী মো. ইকবাল হোসেন ঢাকায় ফার্নিচারের ব্যবসা করেন। এই দম্পতির তাবিদ ইকবাল রাসিব নামে পাঁচ বছরের এক ছেলেসন্তান রয়েছে। বিকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন এই দম্পতি।

রেলওয়ের কর্মীরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ভৈরব বাজার স্টেশন অতিক্রম করছিল। এ সময় রেলওয়ের সদর দফতরের কন্ট্রোলরুম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টারকে জানানো হয়, সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ড-বগিতে এক প্রসূতির প্রসবব্যথা উঠেছে। ট্রেনটি যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে থামিয়ে প্রসূতিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেন একটি সিএনজি অটোরিকশা স্টেশনে রাখা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখেন স্টেশনের পয়েন্টসম্যান শাহরিয়ার আহমেদ ইমন এবং প্ল্যাটফর্মের ব্যবসায়ী মো. ডালিম। সন্ধ্যার দিকে ট্রেনটি তালশহর স্টেশন অতিক্রমের সময় প্রসূতি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তখন ট্রেনে থাকা এক চিকিৎসক, নারী অ্যাটেনডেন্ট এবং যাত্রীরা এগিয়ে আসেন। তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেন। মা ও শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন চিকিৎসক। এরপর ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে প্রস্তুত রাখা অটোরিকশা দিয়ে দ্রুত প্রসূতিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান শাহরিয়ার আহমেদ ইমন এবং ডালিম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স স্মৃতি রানী রায় বলেন, ‘এখানে আনার পর প্রসূতি ও নবজাতককে চিকিৎসা দেওয়া হয়। মা-মেয়ে দুজনে সুস্থ আছেন।’

বিপদে ওই প্রসূতির পাশে দাঁড়াতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করে পয়েন্টসম্যান শাহরিয়ার আহমেদ ইমন এবং মো. ডালিম জানান, আমরা ভালো কাজের সাক্ষী হলাম। মা ও শিশুটির মঙ্গল কামনা করছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কন্ট্রোলরুম থেকে খবর পাওয়ার পরই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছিলাম। কিন্তু তার আগেই চলন্ত ট্রেনে সন্তানের জন্ম হয়েছে। তবে ট্রেনের সবাই সহযোগিতা করেছে বিধায় কোনও ধরনের সমস্যা হয়নি।’

সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আগামী ৯-১৪ এপ্রিলের মধ্যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা বলেছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু আজ হঠাৎ ট্রেনে এমন ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনের সবার সহযোগিতায় সুস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।’

নবজাতকের বাবা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ট্রেনের মধ্যে চিকিৎসকসহ সবাই এগিয়ে না আসলে হয়তো বিপদ হতো। সবার সহযোগিতায় স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু হয়েছে। এজন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞ আমি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে হাসপাতালে আনার চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে মা-মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না করে চলে গেছেন তারা। তবে মা ও নবজাতক সুস্থ আছেন।’