নোয়াখালীতে কোথাও বন্যার উন্নতি কোথাও অবনতি, ত্রাণের সংকট

ভারত থেকে আসা উজানের পানির চাপ অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি এবং কোথাও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যা কার্যত অপরিবর্তিত রয়েছে। আর জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টিপাতের ফলে কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীতে ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় ৩৮ মিলিমিটার কম। আগের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১০২ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।’

এদিকে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্যার পানিতে ডুবে থাকলেও বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। অথচ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ত্রাণবাহী অনেক গাড়ি প্রতিদিনই নোয়াখালী ঢুকছে। মূলত প্রশাসনের সঙ্গে ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয় না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের লুদুয়া গ্রামের বাসিন্দা সেনাসদস্য মো. মামুন জানান, তিনি দুই দিন ধরে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন ত্রাণের জন্য। কিন্তু এখনও ত্রাণ পাননি। ব্যক্তিগতভাবে কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তার এলাকার বেশিরভাগ মানুষ এখন পর্যন্ত কোনও ত্রাণ পায়নি। এ অবস্থায় ত্রাণের জন্য বন্যায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে।

চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, চাটখিলে বন্যার পানি এখনও কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা পুরোপুরি প্লাবিত হয়ে আছে। এখানকার প্রায় দুই লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ৪৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। এ ছাড়া যা আসছে সবই ব্যক্তি উদ্যোগের ত্রাণ। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ত্রাণ একেবারেই অপ্রতুল।

জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হাকিম কোয়ার্টার, কাজী কলোনি, হরিনারায়ণপুর ও রশিদ কলোনি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকাতেই আগের দিনের তুলনায় পানি কমেছে। বাসাবাড়িগুলো হাঁটুসমান বন্যার পানিতে ডুবে আছে। মূল শহর থেকে দূরের এলাকাগুলোতে প্রায় কেমরসমান পানি। শহরের গণপূর্ত ভবনের সামনে, টাউন হল মোড়, জামে মসজিদ মোড়, পৌর বাজার ও গ্যারেজ এলাকা প্লাবিত হয়ে আছে।