সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে সাগর উপকূল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া আরও ৫ ফিশিং ট্রলার ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিকালের দিকে মাঝিমাল্লাসহ এসব ট্রলার মিয়ানমার নৌবাহিনী ছেড়ে দিলে কোস্টগার্ডের টহল জাহাজ ট্রলারগুলো সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে নিয়ে আসে। আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাটে মাঝিমাল্লাসহ ট্রলারগুলো নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে টেকনাফ কোস্টগার্ড। ট্রলারগুলোতে ৪৭ জন মাঝিমাল্লা ও জেলে রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে জানানো হবে বলে কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এর আগে ধরে নিয়ে যাওয়া একটি ফিশিং ট্রলার ছেড়ে দিয়েছিল মিয়ানমার নৌবাহিনী। ট্রলারটি বৃহস্পতিবার দুপুরে ১১ জন মাঝিমাল্লাসহ শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাটে এসে পৌঁছে। এর মধ্যে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে নিহত এক জেলের মরদেহ এবং গুলিবিদ্ধ দুই জন জেলে রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫৮ জন মাঝিমাল্লাসহ ৬টি ট্রলার ফেরত এসেছে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জেলে মো. ওসমান গনি শাহপরীর দ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়া এলাকার সাইফুল কোম্পানির ট্রলারের জেলে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ২ জেলেও ওই ট্রলারের।
ধরে নিয়ে যাওয়া অপর ৫ ট্রলারের মধ্যে শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রীপাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমানের ২টি, মৃত আলী হোছনের ছেলে আবদুল্লাহ, তার ভাই আতা উল্লাহ ও উত্তরপাড়ার ছৈয়দ মাঝির ছেলে মো. আছেমের একটি করে।
ট্রলার মালিক মতিউর রহমান জানান, প্রথমে নিহত জেলেসহ সাইফুলের মালিকাধীন ট্রলারটি শাহপরীর দ্বীপ জেটি আসে দুপুর আড়াইটায়। বিকালে অপর ৫টি ট্রলারসহ জেলেরা সেন্টমার্টিনে এসেছে। সেখানে জেলেদের সঙ্গে আলাপ করে কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশের নৌবাহিনী তথ্য সংগ্রহ করছে। সেন্টমার্টিন থেকে ওই ট্রলারও শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে আনা হবে।
ট্রলার মালিক সাইফুল জানিয়েছেন, সাগরে মাছ ধরার সময় হঠাৎ করে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে গুলিবর্ষণ করে। এরপর ৬টি ট্রলারসহ মাঝিমাল্লাদের ধরে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। যেখানে তার মালিকাধীন ট্রলারে গুলিবিদ্ধ ৩ জনের মধ্যে একজন মারা যায়। বৃহস্পতিবার সকালে ওই ট্রলারটি ছেড়ে দিয়েছে।
কোস্টগার্ডের শাহপরীর দ্বীপের দায়িত্বরত কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করে) বিষয়টি স্বীকার করে জানান, মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার সকালে একটি, বিকালে ৫টি ট্রলার ছেড়ে দিয়েছে। ৫টি ট্রলার ও মাঝিমাল্লা ও জেলেকে শুক্রবার সকালে শাহপরীর দ্বীপের জেটিতে নিয়ে আসা হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর আড়াইটায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমার মধ্যবর্তী বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের মাছ ধরার নৌকায় মিয়ানমারের নৌবাহিনী গুলি করে এবং ৬টি বোট জেলেসহ আটক করে নিয়ে যায়। গুলির ঘটনায় একজন নিহত এবং দুই জন আহত হয়েছে। ঘটনার বিষয়টি জেলেদের পরিবারের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে জানান। পরে মিয়ানমার নৌবাহিনী বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে ১টি ট্রলারসহ জেলেদের হস্তান্তর করে। বৃহস্পতিবার আড়াইটার দিকে নিহত জেলের মরদেহ ও ১১ জন জেলে নিয়ে একটি ট্রলার শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে ফিরেছে।