সম্পত্তি দখলের অভিযোগ সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানের, বিএনপি নেতা বললেন ‘উদ্ধার করেছি’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. ইলিয়াছ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সম্পত্তি দখলসহ তার পরিবারকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সম্পত্তি ফিরে পাওয়াসহ তাদের অত্যাচার থেকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদা সুলতানা।

তবে কসবা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইলিয়াছ ও তার ভাই মো. জাহাঙ্গীর আলম তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ওই জমি উদ্ধার করেছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সাঈদা সুলতানা বলেন, বিএনপি নেতা ইলিয়াছ ও তার ভাই জাহাঙ্গীরের ভূমি দখলসহ নানা অত্যাচারে পরিবার নিয়ে মানসিক নির্যাতনের মধ্যে আছি আমি। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বর্তমানে পরিবারসহ এলাকাছাড়া। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ৭ আগস্ট থেকে ইলিয়াছ ও জাহাঙ্গীর আমাদের জায়গা দখল করেছেন। কসবা পৌর শহরের খাড়পাড়ার ওই জায়গাটি আমার স্বামী মো. সামছুল আলম পৈতৃক ওয়ারিশ সূত্রে মালিক। ২০১৮ সালে সামছুলের মৃত্যুর পর এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে আমি ওই জায়গায় বসবাস করছি। গত ৭ আগস্ট জায়গা দখলের সময় ইলিয়াছ ও জাহাঙ্গীরের বাহিনী আমার ওপর চড়াও হয় এবং হত্যার হুমকি দেন। এরপর থেকে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

সাঈদা সুলতানা আরও বলেন, আমার দাদাশ্বশুর প্রকৌশলী নূরুল আলমের দুজন স্ত্রী ছিলেন। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী রওশন আরা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে কর্মস্থল পাকিস্তানের করাচিতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই রওশন আরার পাঁচ সন্তানের জন্ম হয়। মেয়ে নাছরিন আলম, ছেলে মনজুরুল আলম, মাসুদ আলম ও মহসনি আলম জন্মসূত্রেই পাকিস্তানে বসবাস করতে থাকেন। ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আলম মৃত্যুর আগেই সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বণ্টন করে দেন। এরই আলোকে দ্বিতীয় স্ত্রী রওশন আরাসহ তার সন্তানদের পাকিস্তানে একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ সব সম্পত্তি দিয়ে দেন। এদিকে প্রথম স্ত্রী ও তার তিন সন্তান মনিরুল ইসলাম, আনোয়ারুল ইসলাম ও মোর্শেদ আলমকে বাংলাদেশের সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দেন। এরই সূত্র ধরে আমার শ্বশুর আনোয়ারুলের হিস্যা হিসেবে আমার স্বামী সামছুল কিছু সম্পত্তি পান। আমার শাশুড়ি ও পাঁচ মেয়ে অনুরূপভাবে সম্পত্তি পেয়েছেন। এরই সূত্র ধরে ২০১৪ সালের একটি দলিল মূলে আমি ও আমার সন্তানরা ৩ একর ৮০ শতক জমির মালিক হই। কিন্তু পাকিস্তানের নাগরিক প্রয়াত মনজুরুল আলমের ওয়ারিশদের কাছ থেকে কিছু সম্পত্তির পাওয়ার নিয়ে পুরো জায়গা এবং জায়গার ভেতরে থাকা বাড়ি দখলে নেন ইলিয়াছ ও জাহাঙ্গীর। এর আগে মনজুরুল আলম বাংলাদেশি নাগরিক নন মর্মে আদালত সন্দেহ পোষণ করেন। তার নাগরিকত্ব প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আদালত মামলাটি স্থগিত রেখেছেন। তবে সম্প্রতি জায়গা নিয়ে আদালতে অভিযোগ দেওয়ার পর স্থিতাবস্থার আদেশ স্থগিত করেন আদালত।

সাঈদা সুলতানা আরও বলেন, ওই সময়ে পৌর মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালীন ইলিয়াছ ২০০৩ সালের ২৫ নভেম্বর এক প্রত্যায়নপত্রে নিশ্চিত করেন যে, মনজুরুলসহ তাদের পরিবার বাংলাদেশে থাকেন না। পরে অবশ্য মনজুরুল আলম বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিও করেন। এখন পুরো জমি দখলে নেন তারা।

সংবাদ সম্মলেন উপস্থিত মো. হারুন মিয়া নামে কসবার এক ব্যক্তি জানান, সাঈদা সুলতানার কাছ থেকে তিনি কিছু জায়গা কিনেছিলেন। ইলিয়াছ ও তার ভাই নিজেদের জায়গার মালিক দাবি করে ওই জায়গা দখল করে নিয়েছেন। তিনি কারণ জানতে চাইলে ইলিয়াছ বলেছেন, তারা নাকি ওই জায়গার মালিক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইলিয়াছ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সাঈদা সুলতানার পাঁচ ননদ ও শাশুড়ির কাছ থেকে ১৫ বছর আগে জায়গাটি আমরা কিনেছি। সেটি এত বছর ভোগদখল করেছেন তারা। এখন জায়গাটি আমরা উদ্ধার করেছি।’

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি যাদের কাছ থেকে জায়গা নিয়েছি, তাদের বাড়ি আছে কুমিল্লায়। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। সাঈদা সুলতানার সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি এ নিয়ে মামলা করলেও আদালতের রায় আমার পক্ষে এসেছে। এজন্য জায়গাটি আমরা দখলে নিয়েছি।’