অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সূর্য সেন পল্লীতে এক একর জায়গার ওপর হাসপাতালটির অবস্থান।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের নামে তারই বাস্তুভিটায় হাসপাতালটি ২০০৩ সালে নির্মিত হয়। পরের বছর ২০০৪ সালে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে শুধু আউটডোরে কোনোরকমে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম।
বুধবার (১ জানুয়ারি) সরেজমিন হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, অত্যন্ত মনোরম ও নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশে হাসপাতালটির সুসজ্জিত দ্বিতল ভবন। ভবনটির নিচ তলায় সেমিনার কক্ষ, ওষুধ বিতরণ কক্ষ, মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষসহ সর্বমোট ১১টি কক্ষ রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার, লেবার রুম, প্রস্তুতি রুম, ডিউটি রুম ও রোগী থাকার ওয়ার্ড রয়েছে। রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন রুম। তবে সেখানে অপারেশনের কোনও সরঞ্জাম নেই, আছে সার্জন রুম, স্টোর রুমসহ অন্যান্য কক্ষ।
হাসপাতালটিতে বর্তমান কর্মরত জনবল বলতে দুই জন নিরাপত্তা প্রহরী, একজন আয়াসহ মোট ছয়জন। এখানে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার পদে পান্না রানী পাল, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে মো. শহীদুল্লাহ এবং মিড-ওয়াইফ পদে কর্মরত আছেন নিরুফা আক্তার। এছাড়া আয়া পদে আছেন রত্না ধর এবং নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে আছেন মো. মোজাম্মেল হক ও মো. মনছুর আলম।
ছয়জনের জনবলের মধ্যে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার পান্না রানী পাল মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্ৰে যান সপ্তাহে তিনদিন শনি, সোম ও বুধবার। সপ্তাহের বাকি সময় তিনি বসেন বাগোয়ান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে। মিড্-ওয়াইফ পদে কর্মরত নিরুফা আক্তারও আছেন প্রেষণে। তার মূল কর্মস্থল চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী এমসিএইচ ইউনিটে। আয়া পদে থাকা রত্না ধরও সপ্তাহে তিন দিন এ হাসপাতালে আসেন। বাকি তিনদিন গহিরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে কাজ করেন। নিরাপত্তা প্রহরী দুইজনই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।
এ হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী মো. মনসুর আলম বলেন, 'আমি ২০১৫ সাল থেকে এবং অপর নিরাপত্তা প্রহরী মোজাম্মেল হক ২০১০ সাল থেকে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত। তবে গেল বছর জুন থেকে আমাদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। যে কারণে আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।'
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি সূর্য সেনের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। স্মৃতিসৌধের সামনে একটি বকুলের চারাও রোপণ করেন তিনি।
হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা পুরোদমে চালু প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক লিকসন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ কারণে বাইরে থেকে প্রেষণে লোক এনে এ হাসপাতাল চালু রাখা হয়েছে। এ বিষয়টি সম্পর্কে আমরা একাধিক বার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।'