‘ভারতের প্রেসক্রিপশনে’ সাঈদীকে হত্যা করা হয়েছে, অভিযোগ তার ছেলের

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে ও জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ বিন সাঈদী বলেছেন, ‘একজন সুস্থ মানুষকে কারাগার থেকে নিয়ে এসে পরিকল্পিতভাবে ভারতের প্রেসক্রিপশনে হত্যা করা হয়েছে। যখন আল্লামা সাঈদীকে নিয়ে আসা হয় আমি তখন হাসপাতালে অবস্থান করছিলাম, আমি অসংখ্যবার তাদের কাছে অনুরোধ করেছি আমার সঙ্গে একটিবারের জন্য দেখা করানোর জন্য। কিন্তু তারা আমার সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। কারণ, আমার সঙ্গে যদি দেখা করতে দেওয়া হতো তাহলে যারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আল্লামা সাঈদীকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে সেটা ধরা পড়ে যেতো।’

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে মীরসরাই উপজেলার ৯ নম্বর মীরসরাই সদর ইউনিয়নের পূর্ব কিসমত জাফরাবাদ রহমাতুল্লিল আলামীন ইসলামিক একাডেমি ও হেফজখানার উদ্যোগে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘২০১০ সালের ২৯ জুন আল্লামা সাঈদীকে খুনি হাসিনা সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে গ্রেফতার করেছে। যখন তাকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল যুদ্ধাপরাধ নয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলা। যে মানুষটি দীর্ঘ ৫২ বছর বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ৫০টি দেশ ঘুরে মানুষকে কোরআনের দাওয়াত দিয়েছেন। যে মানুষের মুখে কোরআন শুনে পৃথিবীতে প্রায় এক হাজারের অধিক বিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। সেই মানুষটি নাকি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। এই আঘাতের মিথ্যা হাস্যকর মামলায় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে ১৩টি বছর রেখেছিলেন। সাক্ষীদের ক্ষেত্রে আপনারা জানেন মামলার সাক্ষীদের ঢাকার সেফ হাউজ নামক একটি জায়গায় দিনের পর দিন ট্রেনিং দিয়ে তাদের আদালতে হাজির করা হতো।’

‘সাঈদী হত্যায়’ ভারতের সংশ্লিষ্টতার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কারাগারে আব্বার (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) সঙ্গে প্রতিমাসে একবার করে সাক্ষাতের সুযোগ পেতাম। ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট যখন আব্বাকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার ২৬ দিন আগে আমরা আব্বার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আর ৪ দিন পর আব্বার সঙ্গে আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একজন সুস্থ মানুষকে কারাগার থেকে নিয়ে এসে পরিকল্পিতভাবে ভারতের প্রেসক্রিপশনে হত্যা করা হয়েছে। আমি যদি দেখা করতে পারতাম তাহলে আমার বাবা নিশ্চয়ই আমাকে বলতেন আমার বুকে কোনও ব্যথা নেই। আমাকে তারা পরিকল্পিতভাবে হাসপাতালে এনেছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাবে বিধায় তারা আমাকে আব্বার সঙ্গে এক মুহূর্তের জন্য দেখা করতে দেয়নি।’

বাবা হত্যার বিচার চেয়ে মাসুদ বিন সাঈদী বলেন, ‘আল্লামা সাঈদীসহ ইসলামি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের কোনও অপরাধ ছিল না। তাদের একটিমাত্র অপরাধ ছিল তারা শুধু আল্লাহর প্রশংসা করেছিল, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কায়েমের রাজনীতি বাংলাদেশে করেছিল এটাই তাদের অপরাধ। আল্লামা সাঈদীকে যারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে সেই খুনি হাসিনার বিচার আমরা চাই। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাই, খুনি হাসিনাকে ভারত থেকে ধরে এনে বাংলাদেশে প্রকাশ্যে ওই ট্রাইব্যুনালের সামনে ফাঁসি দিতে হবে। আমরা আল্লামা সাঈদীসহ ইসলামি আন্দোলনের সকল আলেম হত্যার বিচার চাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাতে হবে।’

প্রসঙ্গত, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।