পাহাড়ে ইউপিডিএফ, জেএসএস, কেএনএফসহ আঞ্চলিক দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ। সোমবার (১২ মে) সকালে পার্বত্য ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি মো. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে, তা আর কোনও অবস্থায় অস্বীকার করা সম্ভব নয়। গত ১০ মে ঢাকায় আলী রীয়াজের নেতৃত্বে গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে’ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আলোচনা হয়। আলোচনার পর পুরো পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। দলটির অন্যতম নেতা মাইকেল চাকমা, যার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাকাণ্ড, মানুষ অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। তার দল ইউপিডিএফ পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা কাজে জড়িত। পাহাড় আজ অশান্ত তাদের কারণে। পাহাড়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। সেই একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান বলেন, ‘দেশের অখণ্ডতা, পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। ইউপিডিএফের অবৈধ অস্ত্রধারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করা না হলে তিন পার্বত্য জেলার শান্তিকামী মানুষকে নিয়ে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়া হবে।’
সমাবেশ থেকে আরও দাবি জানানো হয়—দেশদ্রোহী মাইকেল চাকমা, সন্ত লারমা, প্রসীত খীসা, প্রকৃত রঞ্জন চাকমা, দেবাশীষ রায়, ইয়েন ইয়েনসহ পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সব গডফাদারকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। ঐকমত্য কমিশন থেকে ড. ইফতেখারসহ পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগীদের অপসারণ করতে হবে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান বন্ধে নতুন করে বিজিবির বিওপি স্থাপন করতে হবে। পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি বজায় রাখতে ১৯০০ সালের শাসনবিধি বাতিল করে বৈষম্যহীন পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ার উদ্যোগ নিতে হবে।
এদিকে, একই দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে ইউপিডিএফসহ পাহাড়ি সব সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম। সমাবেশে বক্তব্য দেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েসসহ স্থানীয় নেতারা।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদ বলেন, জাতীয় ঐকমত কমিশনের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম কীভাবে একটি সশস্ত্র সংগঠন, চাঁদাবাজ, হত্যাকাণ্ড ও গুমের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। ইউপিডিএফ দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টি করে আসছে। জুলাই বিপ্লবের পর নানাভাবে নানা কর্মসূচি দিয়ে পাহাড়কে অশান্ত করে রেখেছে তারা। পাহাড়ে শান্তি চুক্তির কারণে বাঙালিরা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছে। বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এই কালো চুক্তি বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে ইউপিডিএফসহ সব পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে নেতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।