জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত ৮টার দিকে। এনসিপির ফেসবুক পেজে ৩১ সদস্যের ওই কমিটি প্রকাশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক ও সমালোচনা।
ওই কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে আবদুর রহিম ওরফে জুয়েল নামের এক বিএনপি নেতাকে। রাতে এমন বিতর্কের মধ্যেই ‘ঘি ঢালেন’ ওই বিএনপি নেতা নিজেও। ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি জানান, তার এনসিপির নেতৃত্বে আসার বিষয়টি ‘গুজব’।
জাতীয় নাগরিক পার্টির কুমিল্লা অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, আবদুর রহিমের সঙ্গে একাধিকবার আলাপ-আলোচনা করেই তাকে কুমিল্লা জেলা কমিটির শীর্ষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা ওই বিএনপি নেতার ভাষ্য, তার সঙ্গে কোনও আলাপ-আলোচনা হয়নি। তিনি ৩৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করছেন। এনসিপিতে পদ দিয়ে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। তিনি সামনে যেন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে না পারেন, এ জন্যই তাকে এমন বিতর্কে জড়ানো হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে এনসিপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটির তালিকা প্রকাশ করেন সংগঠনের যুগ্ম সদস্যসচিব (দফতর) সালেহ উদ্দিন ওরফে সিফাত। জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত ওই কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ঘোষণা করা হয় আবদুর রহিমের নাম। ৩১ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটিতে পাঁচ জনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং বাকি ২৫ জনকে সদস্য করা হয়। আগামী তিন মাস অথবা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত এই কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটিতে পাঁচ যুগ্ম সমন্বয়কারী হলেন- সৈয়দ আহসান (টিটু), শরীফুজ্জামান, মাজহারুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম সরকার ও ইব্রাহিম খালিদ হাসান।
সদস্যরা করা হয়েছে- জামাল হোসেন, জাকারিয়া শরীফ, মীর হাসিব মাহমুদ, ফজলে এলাহি (রুবেল), রাসেল ভূঁইয়া, ওয়ালিউল্লাহ শিশির, লতা সরকার, কাজি নাহিদ হোসাইন, নজরুল আমীন, খোদাদাদ ওমর ভূঁইয়া (অনিক), মাসুদ রানা, এনামুল হক, শ্রাবণী চৌধুরী, আবদুস সামাদ, খন্দকার মো. ওমর ফারুক, আল আমিন, এনামুল আলমসহ ২৫ জন।
ফেসবুকে এই কমিটি প্রকাশের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক যেন থামছেই না। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে এনসিপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ওই কমিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা জেলা কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আবদুর রহিম ওরফে জুয়েল একটি বিমা কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবনে লাকসামের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নির্বাচিত সভাপতি এবং পরবর্তী সময়ে লাকসাম উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি নাঙ্গলকোটে বিএনপির রাজনীতি করেন।
বুধবার দুপুরে আবদুর রহিম বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি কিশোর ও তরুণদের দল। আমি ৩৫ বছর বিএনপির রাজনীতি করি, আমি কীভাবে তাদের নেতৃত্বে থাকি? তারা আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই কমিটিতে আমার নাম ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। কমিটি প্রকাশের পর যখন বিষয়টি জেনেছি, তখন সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে এটার বিরুদ্ধে পোস্ট করেছি। ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দুঃসময়েও কখনও বিএনপিকে ছাড়িনি, তাহলে এখন কেন ছাড়তে যাবো?’
আবদুর রহিমের দাবি, সামনে উপজেলা বিএনপির কমিটিতে তার গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার আলোচনা চলছে। তিনি যেন গুরুত্বপূর্ণ পদে যেতে না পারেন এ জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টির কমিটিতে নাম দিয়ে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই আজীবন থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে এনসিপির কুমিল্লা অঞ্চলে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফসা জাহান বিএনপি নেতা আবদুর রহিমের এসব কথাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তার দাবি, ‘আমাদের সঙ্গে আবদুর রহিমের বেশ কয়েকবার কথা ও আলোচনা হয়েছে। তার মতামতের ভিত্তিতেই কমিটিতে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। সর্বশেষ গতকাল (মঙ্গলবার) রাতেও তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তখন বলেছেন, তিনি অসুস্থ তাই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এরপর আমরা ফেসবুক পেজ থেকে কমিটি সরিয়ে নিয়েছি। আর বিষয়টিকে যেভাবে ছড়ানো হচ্ছে, এটি তেমন বড় কোনও ঘটনা নয়। শিগগিরই নতুন করে কমিটি প্রকাশ করা হবে।’