জামায়াত কর্মী পরিচয়ে মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ, পুলিশ বলছে ‘অভিযোগ নেই’

লক্ষ্মীপুরে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের মামলার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে মেহেদী হাসান তুষার নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। সে নিজেকে জামায়াত কর্মী দাবি করলেও জামায়াত বলছে তুষার জামায়াতের কেউ নয়। এমন ঘটনায় শহরজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

তুষার লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাহার ভেন্ডারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে অপহরণ, মামলার হুমকি, চাঁদা দাবি, জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি শরীফুল ইসলাম নামের এক কৃষক লীগ নেতাকে মামলার হুমকি দিয়ে তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে তুষারের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘তুষার বিভিন্ন সময় সমন্বয়ক ও শিবির পরিচয় দিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেল করে তিন লাখ টাকা নিয়েছে। সে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে, মামলা দেবে বলে ব্ল্যাকমেল করেছে এবং হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। সে লক্ষ্মীপুর বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে হয়রানি করছে।’

তার অভিযোগটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হলে শহরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার একদিন পর শরীফুল ইসলাম তার পূর্ববর্তী বক্তব্যটি প্রত্যাহার করে বলেন, ‘তুষারের সঙ্গে একটি সমস্যা ছিল। তাই সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বক্তব্য দিয়েছি। পরে বিষয়টি সমাধান হলে ভিডিও প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করি।’

অন্যদিকে তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ করেন সাবেক স্কুলশিক্ষক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাহার ভেন্ডারের ছেলে তুষার কয়েকটা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে বাগবাড়ি এলাকা থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। রসুলগঞ্জ থেকে আরও ভেতরের নদীর পাড়ে আমাকে ৪ ঘণ্টা আটক রেখে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আদায় করে তুষার। কথা ছিল আমাকে ছেড়ে দেবে, কিন্তু ছেড়ে না দিয়ে লক্ষ্মীপুর বালিকা বিদ্যানিকেতনের সামনে এনে পুলিশ ডেকে তুলে দেয়। এ ঘটনায় আমার স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা হাসিনা আক্তার বাদী হয়ে তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। আমাকে হয়রানি ও টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তুষারের বিচার কামনা করি।’

এদিকে, ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার বিভিন্ন ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরপাক খাচ্ছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন, এটি চাঁদাবাজির জন্য করা হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে তুষার। তারা আরও বলেন, তুষার বিভিন্ন ব্যক্তিদের টার্গেট করে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে বিভিন্ন মামলায় নাম অন্তর্ভুক্তি করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এতে অনেকেই বাধ্য হয়ে টাকা প্রদান করে। তুষারের ভয়ে এসব বিষয়ে কেউই মুখ খুলছে না। সবাই এর প্রতিকার চাচ্ছে।

এ ছাড়া তুষারের বিরুদ্ধে রয়েছে জমি দখলের অভিযোগ। ৩০ বছর আগে প্রবাসী ওমর ফারুকের ক্রয়কৃত দোকানঘর জোরপূর্বক দখল করে নেয় তুষার ও তার বাবা বাহার ভেন্ডার। প্রবাসী ওমর ফারুকের ছেলে আহমেদ ফাহাদ বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর বাজারের ভেন্ডার বাড়ির সামনে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ আমরা দোকানঘর ভোগ-দখল করে আসছি। কিন্তু সম্প্রতি তুষার ও তার বাবা জোরপূর্বক আমাদের দোকান দখল করে নেয়। আমার বাবা অসুস্থ হওয়া কোনও ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এ ছাড়া থানা-পুলিশ করেও কোনও লাভ হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে তুষার। আমরা এর প্রতিকার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে মেহেদী হাসান তুষার বলেন, ‘আমি জামায়াত নেতা বা কর্মী সেটা সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যাবে। তবে এজাহারের বিষয়ে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তা ছাড়া অন্য যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা-ও মিথ্যা। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার করছে।’

লক্ষ্মীপুর পৌর জামায়াতের আমির আবুল ফারাহ নিশান বলেন, ‘তুষারের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ শুনেছি, তবে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। এ ছাড়া সে জামায়াতের কেউ না। সে জামায়াতের কর্মীও না, কোনও দায়-দায়িত্বেও নেই। সে যদি জামায়াতের নাম ব্যবহার করে কোনও অপকর্ম করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক বলেন, ‘যে এজাহারটি ঘুরপাক খাচ্ছে তা ভুয়া। এ ছাড়া চাঁদা দাবির বিষয়ে আমাদের কাছে এমন কোনও অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।’