ভোর থেকে যেভাবে প্রচারণায় ছিলেন সাখাওয়াত

জনসংযোগে ব্যস্ত সাখাওয়াতসোমবার আনুষ্ঠানিক প্রতীক পাওয়ার আগেও বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। তখন প্রতীক ছিল না। তাই ব্যক্তিগতভাবেই তখন প্রচারণা চালিয়েছেন সাখাওয়াত। সোমবার প্রতীক পাওয়ার পর মঙ্গলবার ভোর থেকে জোরেশোরে সমর্থন আদায়ে নেমে পড়েন তিনি। হাতে ধানের শীষ নিয়ে এখন সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন বিএনপির এই প্রার্থী।

মঙ্গলবার ভোর থেকেই প্রচারণায় নামেন সাখাওয়াত। কখনও একা, কখনও নেতাকর্মী বেষ্টিত হয়ে, আবার কখনও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে চালান প্রচারণা।

কাকাডাকা ভোরে শুরু প্রচারণা

প্রতিদিন ভোরেই শহরের জিমখানা ও সিটি করপোরেশনের নগর ভবন এলাকায় ব্যায়াম করতে, হাঁটতে বের হন প্রচুর মানুষ। মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬টায় নগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামালসহ আরও  কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সেখানেই পৌঁছান সাখাওয়াত হোসেন খান। হাত মাইকে প্রচারণার পাশাপাশি তিনি চালান গণসংযোগ। ওই সময়ে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেন সাখাওয়াত। তিনি বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন নিশ্চয় চায়, আপনারাও বোধ হয় চান। তাই পরিবর্তনের অঙ্গীকারে এবার ধানের শীষে ভোট দিন।’জনসংযোগে সাখাওয়াত

সাখাওয়াতের সঙ্গে থাকা একজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ‘মঙ্গলবারের ভোরবেলাকে ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত পেশাজীবীরাই মূলত সকালে হাঁটতে বের হন। তাদের টার্গেট করেই আজ প্রচারণা চালান সাখাওয়াত।’

এছাড়া শহরের খানপুর হাসপাতাল রোড, চাষাঢ়া, খানপুর রেললাইন এলাকায়ও গণসংযোগ করেন সাখাওয়াত ও তার লোকজন।

বোস কেবিনে নাস্তা

নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ বোস কেবিন স্থানীয় বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আড্ডাস্থল। প্রতিদিন সকালে গণ্যমান্য অনেকেই এখানে নাস্তা করতে আসেন। মঙ্গলবার সকালে এ রেস্তোরাঁতেই নাস্তা করেন সাখাওয়াত। চা খেতে খেতে কথা বলেন অনেকের সঙ্গে।

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জনসংযোগ

সকাল সাড়ে ৮টায় সাখাওয়াত যান শহরের মন্ডলপাড়া ও ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায়। মন্ডলপাড়া এলাকা দিয়ে মূলত মুন্সীগঞ্জের লোকজন নারায়ণগঞ্জ শহরে আসেন। আর সাখাওয়াতের আদি নিবাস হলো মুন্সীগঞ্জে। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে ভাড়া থাকেন। আর নারায়ণগঞ্জে মুন্সীগঞ্জের প্রচুর মানুষ স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবেও বসবাস করছেন। এসব কারণে মন্ডলপাড়া এলাকায় সকাল থেকেই ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালান তিনি।

পরে সাখাওয়াত শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায়ও প্রচারণা চালান। সেখানে তিনি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানমুখী শ্রমিক, পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকার সড়ক দিয়ে হাজার হাজার নারী পুরুষ স্ব স্ব কর্মস্থলে যান। সে সুযোগটিও মঙ্গলবার সকালেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন সাখাওয়াত।সাখাওয়াতের প্রচারণায় ব্যস্ত বিএনপির নেতারা

কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে প্রচারণা

সকাল ১১টায় শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় বের হন সাখাওয়াত। বঙ্গবন্ধু সড়কের ২নং রেল গেট, গ্রীন্ডলেজ ব্যাংক মোড়, চাষাঢ়া হয়ে আবারও দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয় প্রচারণা।

সাখাওয়াতের সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার, সেক্রেটারি কাজী মনিরুজ্জামান, নগর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সেক্রেটারি এটিএম কামাল, সাবেক তিনজন এমপি গিয়াসউদ্দিন, আবুল কালাম, আতাউর রহমান খান আঙ্গুর, জেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেল প্রমুখ।

দুপুর ১২টার পর সাখাওয়াত বিএনপি কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শঙ্কার কথা বললেন সাখাওয়াত

সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘মঙ্গলবার ভোর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছি। এ সময় সাধারণ ভোটারদের উৎসাহ ও গণজোয়ার দেখে আমি অভিভূত। তবে অনেক ভোটার শঙ্কা প্রকাশ করেন, তারা আদৌ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি ভোট কেন্দ্রে যেতে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো না হলে, তারা ভোট কেন্দ্রে গেলে গণরায় আমার পক্ষে, ধানের শীষের পক্ষেই যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, গুম হত্যা ও গণতন্ত্র হরণে ক্ষুব্ধ নারায়ণগঞ্জবাসীর মনে আজ পরিবর্তনের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয়তাবাদী দল জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হলে জনগণের ভোটশক্তির জোরেই ধানের শীষ বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হবে। আইভীকে নিয়ে কিছু বলবো না। কিন্তু তিনি যেই নোকায় উঠেছেন সেই নৌকাকে বাংলার মানুষ আজ চায় না।’

তিনি বলেন,‘বিজয়ী হলে ফ্লাইওভারসহ সব সরু রাস্তা প্রশস্তকরণের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে যানজট দূর করা হবে। শীতলক্ষ্যা ব্রিজ তৈরি করে দুই পাড়ের বিভক্তি মেটানো হবে। অযৌক্তিকভাবে চাপানো ট্যাক্স সহনীয় করা হবে। সামাজিক উন্নয়নে হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, স্কুল প্রতিষ্ঠিত করা হবে।’

আরও পড়ুন- 

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন: অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে আ.লীগে
খুলে দেওয়া হয়েছে সেই কলেজের তালা

/বিটি/এফএস/