পদ্মার কাশবন ফুলে ফুলে সাদা

পদ্মার পাড়ে কাশফূলের সমারোহ শান্ত পদ্মা। জলজ চাদরে ঢেউ জাগে কি জাগে না। এ যেন কিশোরীর হাতের আয়না। এ আয়নায় উপুড় হয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আকাশ। সেখানে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘ। পদ্মার তীরে, চরে তখন হেমন্তের হিমেল হাওয়া। সেই হাওয়ার দোলা ছুঁয়ে যায় চরের বুক সাদা করে ফুটে থাকা কাশবনে। শরত পেরিয়ে হেমন্ত এলেও পদ্মার চরগুলোতে এখনও ছড়িয়ে রয়েছে শারদীয় স্নিগ্ধতা।

পদ্মা নদীর মাদারীপুর-শরীয়তপুর অংশে চর রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫-১৬টি। প্রতিটি চরেই এখনও দিগন্তজুড়ে ছড়িয়ে আছে কাশবন। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথ হয়ে লঞ্চ, ফেরি বা স্পিডবোটে যাওয়া-আসার পথে মুগ্ধ হন এ সৌন্দর্যে। মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোর মানুষও এসব চরে ছুটে আসেন শান্ত প্রকৃতি, গাঢ় নীল আকাশ ও শুভ্র-স্বচ্ছতার কাশফুলে মোহিত হতে। দল বেঁধে নৌকা বা ট্রলারে চড়ে এসে তারা হারিয়ে যান কাশবনের প্রাকৃতিক শোভায়। এ বছর যেন এই কাশফুল একটু বেশিদিন ধরে ছড়িয়ে যাচ্ছে অপরূপ শোভা।

পদ্মার পাড়ে কাশের সমারোহ

বৃহস্পতিবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথ হয়ে বরিশাল যাচ্ছিল একটি লঞ্চ। লঞ্চের যাত্রী সাঈদ আহমেদ ডেকে দাঁড়িয়ে একের পর এক তুলছিলেন কাশফুলের ছবি। জানালেন, কাশবন ও কাশফুল তিনি আগেও দেখেছেন। কিন্তু এত দিগন্ত বিস্তৃত কাশবন তিনি আগে কখনও দেখেননি। সাঈদ বলেন, ‘আমার জীবনে এক সঙ্গে এত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত কাঁশফুলের শুভ্রতা কখনও দেখিনি। আগের চেয়ে এবার পদ্মায় অনেক বেশি কাশফুল দেখা যাচ্ছে।’

আঞ্জুমান জুলিয়া নামের অন্য এক যাত্রী মোবাইল ফোনে কাশফুলের ছবি তুলছিলেন। তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘কাশবন ও ফুলের এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে মন ভরে না। এমন দৃশ্য কাছে গিয়ে দেখতে হয়। মনে হচ্ছে, এখনই নেমে যাই কোনও একটি চরে।’

মাদারীপুর থেকে বন্ধুদের নিয়ে কাশবন ও পদ্মার সেতুর কাজ দেখতে এসছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। এত কাশফুল একসঙ্গে আগে কখনও দেখিনি।’

লঞ্চে কাশবন দেখতে যাওয়া

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা এসাহাক বেপারী বলেন, ‘প্রতিবছরই পদ্মায় নতুন নতুন কাশবন হয়। তবে এবার অনেক বেশি হয়েছে। কারণ, এবার পলি পড়েছে বেশি। নতুন পলিমাটিতে কাশফুলের গাছ ভালো জন্মে। তাই এবার পদ্মার চরগুলোতে কাশফুলের মেলা।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরতের শেষ দিকে কাশফুলের গাছ কেটে নিয়ে যান তারা। পরে কাশফুলের গাছগুলো শুকিয়ে তারা জ্বালানি হিসেবে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পানের বরজের ছাউনি তৈরির কাজেও লাগে কাশফুলের গাছ। তবে এবার শরত পেরিয়ে হেমন্ত এলেও কাশবনগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে শোভা। তাই এবার তাদের কাশফুলের গাছ কাটতেও দেরি হচ্ছে। তাতে অবশ্য আক্ষেপ নেই তাদের। কাশবনের সৌন্দর্যে তারাও মুগ্ধতায় ডুবে রয়েছেন।

কাশবনের পাশে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ

মাদারীপুরের পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সুবল বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদীর তীরের কাশবন আর আগের মতো নেই। প্রাকৃতিক কারণেই এখানকার কাশবন কমে যাচ্ছে। তবে এবার পদ্মায় বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কাশবন দেখা গেছে। এতে এদিকে সৌন্দর্যপিপাসুদের ভিড়ও বাড়ছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটা নিশ্চয় সুখবর।’