চুরির অপবাদ দিয়ে দুই তরুণকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

স্বপন মিয়া ও মাসুম মিয়ানারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চুরির অপবাদ দিয়ে দুই তরুণকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ব্রাহ্মন্দী সাড় পাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার স্বপন মিয়া ও তার চাচাতো ভাই মাসুম মিয়াকে স্বজনরা শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

স্বপন মিয়ার মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘স্বপন ও মাসুমকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে তাদের ধরে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটানো হয়েছে। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষরা তাদের ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে টাকাও দাবি করেছে।’

আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাব্বি ইসমাইল ভূইয়া বলেন,  ‘স্বপন ও মাসুমের শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতন করা হয়েছে।’

স্বপন মিয়া ব্রাহ্মন্দী গ্রামের মোনতাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি যানবাহনের বডি মিস্ত্রির কাজ করেন। মাসুম তার চাচাতো ভাই তাহের আলীর ছেলে। তিনি টিউবওয়েল বসানোর কাজ করেন।

স্বপন মিয়া ও মাসুম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে কাজ শেষে বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন।  শুক্রবার ভোরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের  ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাইদুল হকের নেতৃত্বে স্থানীয় আহাম্মদ আলীর ছেলে সিরাজ, নজরুল, সেলিম, শহীদুল্লাহ ও আলমগীর তাদের শোবার ঘর থেকে ডেকে ওঠায়। তারপর তাদেরকে রাস্তার পাশের মেহগনি গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়।  পরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যাটারি চুরির অভিযোগে রড দিয়ে হাত-পায়ের তালু ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করতে থাকে। খবর পেয়ে তাদের স্বজনরা ছুটে এলে তাদেরকেও পিটিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে স্বজনরা সন্তানদের বাঁচানোর জন্য থানা পুলিশের কাছে যান।

স্বপন মিয়া ও মাসুম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে আরও জানান, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিদউল্লাহ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে এলেও পুলিশের সামনেই ইউপি সদস্য জাইদুল হকের লোকজন তাদেরকে নির্যাতন করতে থাকেন। জাইদুল স্থানীয়ভাবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে পুলিশকে চলে যেতে বলেন। পুলিশও ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরে দুপুরের দিকে তাদেরকে আমগাছের সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে পুনরায় পেটাতে থাকে। তারা কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মারা যেতে পারে ভেবে ওই দিন রাত ১১টার দিকে ইউপি সদস্য জাইদুল হক তাদেরকে থানায় নিয়ে যান।

স্বপন মিয়া ও মাসুম মিয়ার দাবি, পুলিশ আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে তাদেরকে থানা থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। পরে স্বজনরা তাদের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

পুলিশের সামনে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই রফিদউল্লাহ বলেন, ‘স্বপন ও মাসুম চুরি করেছে— এমন কোনও প্রমাণ পুলিশ পায়নি। থানায় তাদের ব্যাপারে আগে কোনও ক্রিমিনাল রেকর্ডও নেই। ’

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক বলেন, ‘কেউ যদি অপরাধ করে থাকে, তাকে পুলিশের কাছে না দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন গুরত্বের সঙ্গে দেখছে। তবে  এ ব্যপারে পুলিশের কোনও অফিসারের গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউপি সদস্য জাইদুল হক বলেন, ‘আমার সামনে কেউই তাদের পেটাতে আসেনি। স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়নি।’

ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাখ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউপি সদস্য আমাকে বিষয়টি অবহিত করেনি। আমি এখন জানলাম।’