প্রিয়ক-তামাররার মরদেহ বাড়িতে, শোকে ভারী শ্রীপুরের বাতাস

শ্রীপুরগাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের এফএইচ ফারুক আহমেদ প্রিয়ক ও তার একমাত্র শিশুকন্যা তামাররা প্রিয়ন্ময়ীর মরদেহ আনা হয়েছে। সোমবার (১৯ মার্চ) রাত আটটার দিকে তাদের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। তাদের কফিনবন্দি মরদেহ দেখতে এলাকার হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছেন ফারুকের বাড়িতে। শোকে ভারী হয়ে উঠেছে শ্রীপুরের বাতাস।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন বলেন, কফিনে রাখা মানুষ দুটি এখন আর বাড়িতে ঢুকবে না। নেপালের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল জীবন্ত তিনজন মানুষ। তিনজন ফিরল ঠিকই কিন্তু দুজন ফিরল লাশ হয়ে।

ফারুকের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনার পর জেনেছিলাম আমার ছেলে তার মেয়েসহ চিকিৎসা করাতে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে। গত তিন দিন আগে সব শুনে ফেলেছি। কফিন দেখে কোনও লাভ নেই। কফিনের কেউ এখন আর বেরিয়ে আসবে না।’

ফারুকের স্ত্রী আলমুন নাহার অ্যানির চাচা জিল্লুর রহমান বাবু বলেন, ‘তাকে খবরটি দেওয়ার জন্য কমপক্ষে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত বাসার সামনে মাইকিং করেছি। স্বামী ফারুক ও শিশুকন্যা তামাররার মৃত্যুর খবর তাকে সরাসরি জানাতে পারিনি।’

জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘মাইকে মৃত্যুর খবর প্রথম শুনে অ্যানি বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। পরে বেশ কয়েকবার নানাভাবে বুঝিয়ে তাদের নিশ্চিত মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। এরপর থেকে কেবলই মুর্ছা যাচ্ছে অ্যানি। জ্ঞান ফিরে আসার পর আবার বলছে মৃত্যুর খবর সঠিক নয়। স্বামী ফারুক ও তার শিশুকন্যা ফিরে আসবে।

নিহত ফারুকের চাচাতো বোন নাছিমা বলেন, ‘আজ তাদের নেপাল সফরের অভিজ্ঞতা জানতে লোকজন আসার কথা ছিল। হাজার হাজার লোক আসছে তাদের মরদেহ দেখতে। বিমান দুর্ঘটনা সব স্বাভাবিক ঘটনাকে অস্বাভাবিক করে দিলো। কফিনে রাখা মরদেহ কাল এখানে আর থাকবে না।’

উল্লেখ্য, ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ৪৯ আরোহীর মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে চার পাইলট-ক্রুসহ ২৬ জন বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে ২৩ জনকে শনাক্ত করে আজ দেশে নিয়ে আসা হয়। এদিকে রবিবার পর্যন্ত এ ঘটনায় আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে ৬ জন দেশে ফিরেছেন। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। তারা হলেন- শাহরিন আহমেদ মুমু, মেহেদী হাসান, সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা, আলমুন নাহার অ্যানি, রাশেদ রুবায়েত ও শাহিন ব্যাপারী। বাকি চার জন সিঙ্গাপুর, নেপাল ও ভারতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।