কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত, কর্তৃপক্ষের দাবি ব্যালট সংকট

সংঘর্ষের পর ভোটারদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছে পুলিশগাজীপুরে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত রয়েছে। ওইসব কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ব্যালট শেষ হয়ে গেছে। তাই ভোট গ্রহণ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েটি কেন্দ্রে বিএনপির কোনও পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের অভিযোগ, তাদের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কোথাও কোথাও তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

কোনাবাড়ীর গ্রেটম্যাট প্রাইমারি স্কুল ৬২ নম্বর কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ রয়েছে। এ কেন্দ্রে চারটি ভোটার বুথ রয়েছে। এ কেন্দ্রে বিএনপির কোনও পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যালট পেপার শেষ হওয়ায় ভোট গ্রহণ বন্ধ রয়েছে। এ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫২ জন। এরমধ্যে ৩০০‘র মতো ভোট পড়েছে।’ কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন তারা কেন্দ্রে আসেনি এটা তো আমি বলতে পারবো না।’

হাসান সরকার জানান, তিনি ৪টি কেন্দ্রে ঘুরে বিএনপির কোনও পোলিং এজেন্ট খুঁজে পাননি। এরমধ্যে একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ। আরেকটি কেন্দ্রের দুটি বুথেও ভোট গ্রহণ বন্ধ রয়েছে।

আব্দুর রহমান (৪০) নামে এক ভোটার বলেন, ‘প্রায় দেড়ঘণ্টা পর্যন্ত ভোট দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বলা হচ্ছে ব্যালট পেপার নেই।’

গাজীপুরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইনকোনাবাড়ীর আইডিয়া হাইস্কুল কেন্দ্রে ৬০ নম্বর কেন্দ্রের দুটি বুথেও ভোট গ্রহণ বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, এই দুই বুথের পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ায় ভোট গ্রহণ বন্ধ রয়েছে। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাহমুদুল আমিন বলেন, ‘ঝামেলা হওয়ায় দুটি বুথের ভোট গ্রহণ বন্ধ আছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছে। কেন্দ্রের ২ হাজার ১৬২ ভোটের মধ্যে পড়েছে ২৮২টি।’

৪৮নং পারিজাত কোনাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৭ নম্বর কেন্দ্রে বিএনপির কোনও পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি। তবে এ কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট চলছে। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমিও এসে বিএনপির কোনও পোলিং এজেন্ট পাইনি। এ কেন্দ্রে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৪১৫টি ভোটের মধ্যে ৬৬৪ ভোট কাস্ট হয়েছে।’

ভোটারদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছে পুলিশ

মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া কওমি মাদ্রাসা ৫৮ নম্বর নারী কেন্দ্রেও বিএনপির কোনও পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ১১৮ জন। এরমধ্যে ৫০০ মতো ভোট কাস্ট হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সকালে বিএনপির তিনজন পোলিং এজেন্ট এসেছিল। কিন্তু পরে কেন তারা থাকেনি আমি তো বলতে পারবো না।’

১৭নং ওয়ার্ডের মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ করেন ভোটার গোলাপী বেগম। তিনি জানান, ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে সোয়া ১২টায় ভোট দিতে পেরেছেন তিনি।

কাউন্সিলর আবুল কাশেমের (লাটিম) এজেন্ট আব্দুল কুদ্দুস অভিযোগ করেন, নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা তাকেসহ বিএনপির সব এজেন্টকে বের করে দেয়।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হাসানুল করিম কামাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ব্যালট পেপার দিতে দেরি হওয়ায় বাইরে অপেক্ষমাণ ভোটাররা হইচই শুরু করেন। এ সময় ভোটাররা আতঙ্কে দৌড়াতেও শুরু করে। তখন আধঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে ভোট গ্রহণ চালু করেন।’

একই কেন্দ্রের ১১৪নং ভেনু নারী বুথের প্রিজাইডিং অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাইরে উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ দেখে এক ঘণ্টার জন্য ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসার পর এক ঘণ্টা পর আবার ভোট গ্রহণ শুরু করা হয়।’

রাজ্জাক মাস্টার দাখিল মাদ্রাসার ১১০ এ ১১১ নম্বর ভোটকেন্দ্রের ১০টি বুথের একটিতেও বিএনপির পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টের পাশাপাশি ইসলামি আন্দোলনের মেয়রের পোলিং এজেন্ট দেখা গেছে।

১১০ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার নুরুল হুদা বলেন, এ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৫, বিএনপির ৫ এবং ইসলামী আন্দোলনের ৫ জন পোলিং এজেন্ট কার্ডের ফরম নিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলনের এজেন্টরা ফরম পূরণ করে জমা দিলেও বিএনপির এজেন্টরা দেয়নি।

এদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা নাসির উদ্দিন (হাতপাখা) অভিযোগ করেছেন, বেশ কিছু কেন্দ্রে তার এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘১, ২, ৩, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলো থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আগে থেকেই সিল মারা হয়েছে।’

আরও পড়ুন:

উৎসবমুখর পরিবেশে গাজীপুরে ভোটগ্রহণ চলছে

গাজীপুরের রাস্তায় যানবাহন কম, নেই যানজট