ডালেশ্বর গ্রামে বাসিন্দারা ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করছে। ভাওয়াল বনের ভেতর থেকে তারা বনজ লতা-পাতা, গুল্ম সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করেন। পরে সেগুলো দেশের নামকরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে সরবরাহ করেন। এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে বনজ তথা ভেষজ উদ্ভিদ প্রক্রিয়াকরণের ওপর।
দুপুরের পর থেকে খলার দৃশ্যপট পাল্টে যায়। লতা-গুল্ম নিয়ে খলায় ঢুকছে রিকশা ভ্যান। এ গ্রামের বিভিন্ন খলার চিত্রগুলো ঠিক একই রকম। কোনও কোনও খলা নিরাপত্তার জন্য প্রাচীরঘেরা।
কাদির মিয়ার প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান বলেন, কমপক্ষে ৪০ বছর আগে ওয়াহেদ আলী মিয়ার দেখাদেখি তার বাবাও এ পেশায় যুক্ত হন। ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। দিনে দিনে ভেষজ সংগ্রহের কাজটি ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। তার মতো অনেকেই যুক্ত হন ভেষজ সংগ্রহের কাজে। প্রত্যেকেই পরিবারের সব সদস্যদের এ কাজে নিয়োজিত করেন।
ডালেশ্বর গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের শতাধিক মানুষ ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহের কাজ করেন। প্রায় প্রতিদিন বন থেকে তারা এসব সংগ্রহ করেন।
দরগাহচালা গ্রামের আজম আলী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বিভিন্ন বনে, রাস্তার পাশে, বিল, পুকুর, নদীর পাড় থেকে লতপাতাগুলো সংগ্রহ করি। সারাদিনে সর্বোচ্চ দুটি ভ্যানগাড়ি ভর্তি করা য়ায়। পরে এগুলো ব্যবসায়ীদের খলায় নিয়ে মণ হিসেবে বিক্রি করি।’
ডালেশ্বর গ্রামের ভেষজ খলার মালিক রাশিদা বলেন, তার খলায় লতাপাতা প্রক্রিয়াকরণে ২০ জন লোক কাজ করে। কেউ কাটাকুটি, কেউ শুকানো, কেউ আবার বস্তাভর্তি করাসহ নানা প্রক্রিয়ার কাজে নিয়োজিত। তাদের মজুরি দেওয়া হয় মণ হিসেবে। সংগৃহীত একেক ভেষজের জন্য একেক হিসেবে মজুরি দেওয়া হয়।
আরেক খলার মালিক মনির হোসেন বলেন, খলায় ভেষজ শুকাতে গেলে নানা সমস্যা হয়। মানুষ, গরু, ছাগল খলায় ঢুকে ভেষজ উপাদান নষ্ট করে ফেলে। খলার মেঝে পাকা থাকলে প্রক্রিয়াকরণ সহজ ও সময় কম লাগে।